নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বির্তকিত সেই শিক্ষকের নিয়োগের গোড়াতেই গলদ
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক এক উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া এক কর্মকর্তার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. নকিবুল হাসান খান। সম্প্রতি ওই বিভাগের প্রধান ও পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকীকে ৩ ঘণ্টা ধরে নিজ কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন নকিবুল হাসান খানের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষক।
এরপর এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তার পরিবারের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
আরও পড়ুন: নিরাপত্তা চাইলেন সেই বিজ্ঞানী!
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদন করতে এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ স্কেলে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থাকতে হবে সিজিপিএ ৩.৫০ (৪.০০ স্কেলে)। তবে বিশেষ যোগ্যতা থাকলে যেকোন একটি শর্তের ক্ষেত্রে আংশিক শিথিল রাখা যাবে। সেই সঙ্গে পুরো শিক্ষা জীবনে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরিপ্রত্যাশীদের থেকে আবেদন আহ্বান করেছিলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তবে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত প্রত্যেকটি শর্ত ভেঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পান মো. নকিবুল হাসান খান। ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এবার আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবী সেই বিজ্ঞানীর
২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ জিপিএ ৫.০০ স্কেলে ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন নকিবুল হাসান। এরপর ২০০৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ পান ৩.৫০, যার চতুর্থ বিষয় ছাড়া ফলাফল দাঁড়ায় জিপিএ ৩.২০ তে। এই ফলাফলের পরও বিজ্ঞপ্তির নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ না থাকলেও পেয়েছেন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ।
আবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পাশ করলেও গণিত ব্যতীত অন্য বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কোর্সে পেয়েছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী। অন্যদিকে ইংরেজীতে পেয়েছিলেন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণী। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রেও নকিবুল হাসানের উল্লেখিত একাডেমিক তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আশরাফ আলীর বিভাগের অফিস কক্ষে তালা দিয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় আলোচনায় এসেছে বিভাগটির এই সহকারী অধ্যাপক মো. নকিবুল হাসান খানের নাম।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম এবং অব্যাহতি পাওয়া সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার এহসান হাবীবের মাধ্যমেই এই নিয়োগ পেয়েছিলেন মো. নকিবুল হাসান খান।
আরও পড়ুন: এবার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি সেই বিজ্ঞানীর
বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলম বলেন, আমার এগুলো মনে নেই। যা তথ্য রয়েছে সংরক্ষিত রেজিস্ট্রার দপ্তরে সে অনুযায়ীই কাজ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের সময় শেষের পর থেকে আমার আর কোন দায়িত্ব নেই। তাই বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন। যা তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে সেভাবেই হয়েছে নিয়োগ।
একই সুর ধরে নিয়োগ সংশ্লিষ্টতা নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে মন্তব্য করেছেন এহসান হাবীব। তিনি বলেন, নকিবের সব কিছু ঠিকই আছে বলে আমি জানি। তবে এই নিয়োগের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এছাড়াও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি সাবেক দায়িত্ব পালন করা রেজিস্ট্রার ফজলুল কাদের চৌধুরী।
অন্যদিকে নকিবুল হাসান খানের নিয়োগ পাওয়া বোর্ডে ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে নকিবুল হাসান খানের সরাসরি শিক্ষকের সম্পৃক্ততাও ছিলো এই নিয়োগে বোর্ড এক্সপার্ট হিসেবে। তবে বারবার যোগাযোগ করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি এই অধ্যাপকের।
আরও পড়ুন: হাসপাতালে ৩ শিক্ষকের বিচার চাইলেন ড. আশরাফের স্ত্রী
বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিয়োগ পেলো কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটে থাকলে নিয়োগ পরীক্ষায় বসার সুযোগ নেই। আর এই নিয়োগের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই পূর্বের এই তথ্য নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
নকিবুল হাসানের একাডেমিক ফলাফলের তথ্যের বিষয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগটির প্রধান ড. আশরাফ বলেন, গত আপগ্রেডেশন সভায় নকিবুল হাসান খানের একাডেমিক রেজাল্টের অসঙ্গতি দেখতে পেয়েছি। এর আগে তা আমার জানা ছিলো না।
নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্বে তো অনেক কিছুই হয়েছে। সেটি নিয়ে আমি বলতে চাইনা। তবে আমার দায়িত্বের সময়ে এমন করে নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন নিয়োগ তো দূরের কথা, কোন কাজই করা হবে না। এরকম নিয়োগ হয়ে থাকলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাম্য নয়।
এদিকে বিশেষ যোগ্যতায় নিয়োগ পাওয়া মো. নকিবুল হাসান খানের মন্তব্য জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য প্রদান করেননি তিনি। একাধিকবার ফোন করে মন্তব্য জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ফোন কেটে দেন এই শিক্ষক।