খুবি উপাচার্যের নেতৃত্বে গতি পেয়েছে উন্নয়নমূলক কাজ

খুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন
খুবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন  © টিডিসি ফটো

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্র ছাড়াও অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের গতি ফিরে পেয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের এক বছরের মধ্যে ২০১৬ সালে তিনশত পয়ত্রিশ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় সাপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) কাজের গতি ১৬% থেকে ২৪% উন্নত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের দুই মেয়াদে দায়িত্ব ছাড়ার পরে চার মাস উপাচার্য ছিল না বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্থবির হয়ে যায় শত কোটি টাকারও বেশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজের । বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পরপরই সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেন। ফলে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তিনি গত এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

অবকাঠামোগত কাজের বিষয়ে জানা যায়, ১০ তলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, ৫ তলা আইইআর ভবন, ৪ তলা মেডিকেল সেন্টার, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্ব ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, টিএসসি ভবন, জিমনেশিয়াম কমপ্লেক্স নির্মাণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে। তবে ঠিকাদারের অনিহার কারণে ১১ তলা আবাসিক ভবনের কাজটি পিছিয়ে রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট মোকাবেলায় ইতোমধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের দক্ষিণ ব্লকে ২০০ ছাত্রের এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ ব্লকে ১৪৪ ছাত্রীর আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে।  এছাড়া চলতি বছর উক্ত বঙ্গমাতা হলে আরও ৬০০ আসন বৃদ্ধি পাবে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ১২৫ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অবশিষ্ট সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধারের ব্যবস্থা হিসেবে ক্যাম্পাসে বৃহদাকার পুকুর খনন কাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের জন্য ৪ কোটি ইনস্ট্রুমেন্ট ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে একটি অংশে মহিলাদের নামাজ আদায়ে উপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য ৬৪ লাখ টাকার একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। 

‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সফট অবকাঠামো’ শীর্ষক ৪০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় সাপেক্ষ একটি ডিপিপি ইউজিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যাকবন স্থাপন, স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার বাহিনীর টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহৃত টিনশেড ঘরটিকে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে সংরক্ষণে মেরামত ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কাজে ইউজিসি থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। 

তবে বেশ কিছু পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করা গেলে ক্যাম্পাসের চেহারা বদলে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম ইউজিসির মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ শিক্ষা-গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণে উক্ত অর্গানোগ্রামের অনুমোদন প্রয়োজন।‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সফট অবকাঠামো’ শীর্ষক ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ জমাদানকৃত ডিপিপির অনুমোদন প্রয়োজন। কমপক্ষে আরও ১টি আবাসিক হল নির্মাণে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন।অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়াই দু’বছর (২০২৩-২০২৫) মেয়াদ বৃদ্ধি প্রয়োজন।বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোর মাঠ গবেষণাগার ও সুন্দরবন ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন ছাড়াও আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এসব উদ্যোগ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক  ড. মাহমুদ হোসেন। দায়িত্বগ্রহণের একবছরপূর্তির প্রাক্কালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনীতিক, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনসহ অনন্য সকল মহলে সহযোগিতা কামনা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তাক আহমেদ বলেন, উপাচার্য তাঁর প্রথম বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ এবং মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক গবেষণা অনুদান চালু করেছেন। এগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

করোনা মহামারির এক স্থবির পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক-গবেষক অধ্যাপক  ড. মাহমুদ হোসেন। 


সর্বশেষ সংবাদ