বহিরাগতদের উৎপাতে কোণঠাসা বেরোবি শিক্ষার্থীরা, রাতে মাদকের আড্ডা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বেড়েছে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও শৃঙ্খলাবিরোধি কর্মকাণ্ড। এসব বহিরাগতদের উৎপাতে নিজেদের ক্যাম্পাসেই কোণঠাসা শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন বিকেলের পর বাইরে থেকে আসা মাদক ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় ক্যাম্পাসের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, সন্ধ্যার আগ থেকে শুরু করে রাত ৯টা পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাস যেন হাট-বাজার হয়ে উঠছে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীর চেয়ে বহিরাগতদের সংখ্যাই বেশি। সন্ধ্যার পরপরই কিছু বাইকার লাইসেন্সবিহীন বাইক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা প্রহরীদের তোয়াক্কা না করেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।
একেকটি বাইকে তিনজন থেকে চারজন উঠলেও গতি থাকে বেপরোয়া, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাগুলোতে চলাফেরাকারীদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, এই বাইকাররা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধভাবে প্রবেশই নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তারা মাদকের আখড়া বানিয়েছেন। মাদক সেবনের পাশাপাশি তারা বিক্রির জন্য নিরাপদ জায়গা হিসেবেও ব্যবহার করছেন ক্যাম্পাসকে।
অভিযোগ রয়েছে, বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রনেতার মদদে ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কয়েকটি হলের বিভিন্ন কক্ষে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। হলের ছাদগুলোয় রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাদক এবং গাঁজা সেবনকারীদের উপস্থিতি বাড়ে।
এ ছাড়া পুলিশ ফাঁড়ির মাঠের পাশে, একাডেমিক ভবনের পেছনে, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পাশে, বোটানিক্যাল গার্ডেনে, মসজিদের পেছনে, বাসস্ট্যান্ড রোডে, এমনকি বাসস্ট্যান্ডের ভেতরেও গাঁজার আসর বসে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক ইজার আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গাড়িগুলো আসে সেগুলো হয় শিক্ষার্থী, না হয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসা কারও। এগুলোর বেশিরভাগের লাইসেন্স নেই। আমরা গাড়িগুলো আটকাই, কিন্তু মামলা দিতে পারি না। প্রক্টরিয়াল অফিসের কোন নির্দেশনা নেই। প্রক্টর অফিস থেকে অনুমতি পেলে লাইসেন্সবিহীন গাড়িগুলো ধরে মামলা দেব।’
আরো পড়ুন: নিউমার্কেটে সংঘর্ষে আহত দুই শিক্ষার্থী, একজনের অবস্থা গুরুতর
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ‘পূর্বে এ নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রক্টরিয়াল বডি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এতে কিছু ছাত্রসহ বহিরাগতদের আমরা আটক করেছি। যাদেরকে আটক করা হয়েছে, পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং পরবর্তীতে আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ক্যাম্পাসে উচ্চগতিতে বাইক চালানোর বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘ক্যাম্পাসের চারদিকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়ি চালানোর গতিসীমা থাকলেও কিছু বাইকার এ আইন ভঙ্গ করে গাড়ি চালাচ্ছেন। এজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে গতিসীমা নির্ধারণের জন্য যে প্রতীক দিচ্ছি। এগুলো চলতি সপ্তাহের মধ্যেই হয়ে যাবে। আর ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য লোগোযুক্ত স্টীকার সরবরাহ করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বহিরাগত যে বাইকগুলো বেশি স্পিডে চালায়, তাদেরকে প্রক্টরিয়াল বডি বিভিন্ন সময়ে আটক করেছে। আটকের পরে তারা মুচলেকা দিয়েও বারবার একই ঘটনা ঘটাচ্ছে। যে কারণে আমরা লোগোযুক্ত স্টীকারের ব্যবস্থা করছি। চিহ্নিত গাড়ি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোন গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।’