‘নিয়োগের পর জানা গেল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়’ সংবাদের প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা
গত ২৯ মার্চ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে প্রকাশিত ‘নিয়োগের পর জানা গেলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়!’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার (অর্থ ও হিসাব দপ্তর) মো. ফয়সাল আহমেদ।
এক প্রতিবাদলিপিতে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধার সনদ জালিয়াতি করে চাকরি নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এরূপ ন্যাক্কারজনক মিথ্যা তথ্য প্রদান করে নিউজ প্রকাশ করার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির পূর্বে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থ ও হিসাব বিভাগে চাকরি করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা লগ্নে অর্থ ও হিসাব বিভাগে ‘‘একাউন্টস অফিসার” পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে যোগদান করি। পরবর্তীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে “একাউন্টস অফিসার" ও "সেকশন অফিসার" পদে আবেদন করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। নিয়োগকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ আমাকে মেধার ভিত্তিতে “সেকশন অফিসার" স্থায়ী শূন্য পদে শিক্ষানবীশ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন এবং ২ বছর অতিবাহিত হবার পর কর্তৃপক্ষ চাকরি স্থায়ী করেন। অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ন উদ্দেশ্য প্রনীত, অসত্য ও বানোয়াট।
তার প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে থাকা তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো।তথ্যমতে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকশন অফিসার মোঃ ফয়সাল আহমেদের বাবা মোঃ আঃ হামিদ সরকার, গ্রাম-পূর্ব তেলিজানা, ডাকঘর- রায়গঞ্জ, উপজেলা- রায়গঞ্জ, জেলা- সিরাজগঞ্জ। মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় চাকুরি পেলেও তার পিতা মোঃ আঃ হামিদ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা নন। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সূত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ডেইলি ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ।
২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জোট সরকারের আমলে ২ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জনকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে এবং এ থেকে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯ জনের তালিকার গেজেট প্রণয়ন করা হয়। চারদলীয় জোট আমলে ৭০ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপর জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের নিয়ে কমিটি করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর পরিকল্পনা নেই: প্রতিমন্ত্রী
জামুকা সূত্রে জানা গেছে , গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি জামুকার সুপারিশবিহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বেসামরিক গেজেট নিয়মিত করণের লক্ষে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদন পাঠায়। মোঃ আঃ হামিদ সরকার, পিতা- আজগর আলী সরকার, গ্রাম-পূর্ব তেলিজানা, ডাকঘর- রায়গঞ্জ, উপজেলা- রায়গঞ্জ, জেলা- সিরাজগঞ্জ এর যাচাই বাছাই প্রতিবেদন জামুকাতে পাঠানো হয়। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাজিবুল আলম স্বাক্ষরিত (স্মারক নং ০৫.০৪৩৮৮৬১.০০০.৩৩.০০৪.২০-৮৬) ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘তার সাক্ষীগণ অনুপস্থিত ছিলেন শুনানীতে। উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নাই এবং তাদের মতে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নাই। সবধিক বিবেচনায় তার আবেদন সর্বসম্মতিক্রমে নামঞ্জুর করা হলো।’
জামুকা জানিয়েছে, মোঃ আঃ হামিদ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বেসামরিক গেজেট বাতিল করা হয়েছে। তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আগেই বন্ধ রেখেছে।
এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সহকারী পরিচালক মোঃ শাহ আলম জানান, যাচাইবাছাই শেষে মোঃ আঃ হামিদ সরকারের আবেদন সর্বসম্মতিক্রমে নামঞ্জুর করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফয়সাল আহমেদ। প্রতিবাদে তিনি কোটায় চাকুরি পাননি বলে উল্লেখ করেন।
যদিও এর আগে প্রকাশিত ‘নিয়োগের পর জানা গেলো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নয়!’ সংবাদে ফয়সাল আহমেদের মন্তব্য জানতে চাইলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার মুক্তিযোদ্ধার সনদটিও সঠিক।....লিখিত পরীক্ষায় আমি ২৪ পেয়েছিলাম। আর মৌখিক পরীক্ষা ২৫। কোটা থাকায় আমার নিয়োগ হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, ওই নিয়োগ পরীক্ষায় পাস নম্বর ২৫। সে হিসেবে ফয়সাল আহমেদ পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী স্থায়ী পদে ৪৭ জন প্রার্থীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং অস্থায়ী ভিত্তিতে ১১ জন প্রার্থীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। নিয়োগকৃত ৫৮ জন সেকশন অফিসারের মধ্যে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নিয়োগ পেয়েছেন। এরআগে ওই বছরের ৫ মে নিয়োগ পাওয়া ৫ জনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ যাচাই করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠিতে ক্রম তালিকার ৫ নম্বরে ফয়সাল আহমেদ, পিতা মোঃ আব্দুল হামিদ সরকার এর নাম উল্লেখ রয়েছে। নিয়োগপত্রের শর্তানুযায়ী সবাই মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাখিল করেন। সনদগুলো যাচাই করা জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে আগেই উল্লেখ করা হয়, ফয়সাল আহমেদকে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। যাচাইবাছাইয়ে চাকুরি খোয়ানোর ভয় থেকে আরও অর্থ খরচ করে বিভিন্ন কাগজপত্র তৈরি করে সাধারণ কোটায় নিয়োগ স্থায়ী করেন তিনি।