এই দিনটি শুধুই শোকের নয়, সকলের জন্য সচেতনতার: খুবি ভিসি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ২০০৪ সালের এইদিনে আমরা দেশের কৃতি সন্তানদের হারিয়েছি। আজ তারা বেঁচে থাকলে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারতেন। তাদের মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আর কোনদিন পূরণ হবে না। আমি তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
রবিবার (১৩ মার্চ) নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে কটকা ট্রাজেডি স্মরণে পালিত হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস। শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে খুবি উপাচার্য বক্তব্য রাখেন।
শোক দিবসের অনুষ্ঠানে খুবি উপাচার্য বলেন, আজকের এই দিনটি শুধুই শোক দিবস নয়, এটি আমাদের সকলের জন্য সচেতনতা দিবস। বিশেষ করে প্রতিবছর সেশনাল ট্যুর করতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যাই।
‘‘এক্ষেত্রে সেসব স্থানে চলাচলের জন্য আমাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। যেনো এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।’’
২০০৪ সালের এদিনে সুন্দরবনের কটকায় সফরে গিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের ৯ জন এবং বুয়েটের ২ জনসহ মোট ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হয়ে শাহাদতবরণ করেন। সেই থেকে প্রতিবছর দিনটিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এবছর এ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সাজানো হয় শোকাবহ সাজে। ক্যাম্পাসের হাদী চত্বর থেকে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের সারিবদ্ধ গাছে কালো কাপড় জড়ানো এবং শহীদ শিক্ষার্থীদের প্রতিচ্ছবি কাঠে খোদাই করে শোকের আবহ তৈরি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে এদিন সকাল ১০টায় কালোব্যাজ ধারণ করে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদী চত্বর থেকে একটি শোক র্যালি শুরু হয়ে কটকা স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়।
শোক র্যালিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্ট ও বিভাগীয় প্রধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। এর পরপরই কটকা স্মৃতিস্তম্ভে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রথমে উপাচার্য শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
আরও পড়ুন: ঢাবির ‘ক’ ইউনিটে যে বিভাগগুলো জনপ্রিয়
পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপত্য ডিসিপ্লিন, ইংরেজি ডিসিপ্লিন, রসায়ন ডিসিপ্লিন, সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিন, অপরাজিতা হল, খানজাহান আলী হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল, শিক্ষক সমিতি, অ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদ, শিক্ষার্থীদের সংগঠন ওংকার শৃণুতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়।
এছাড়া সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত শাহাদতবরণকারী শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অতঃপর সেখানে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন।
স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন। পরে শাহাদতবরণকারী শিক্ষার্থীদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাও. মুফতি আব্দুল কুদ্দুস।
দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বেলা ১১টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন, বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, এতিমদের সাথে মধ্যাহ্ন ভোজ, সন্ধ্যা ৬.৪৫ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বালন এবং সন্ধ্যা ৭টায় স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের আয়োজনে শোকসভা ও স্মৃতিচারণ (অফলাইন ও অনলাইন)।