জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ‘পুনরায়’ পরীক্ষা নেওয়ার দাবি
বর্তমানে দেশে অর্ধশত স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৪টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিগুলোতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষা বাদ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের বিভিন্ন কলেজে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএর ভিত্তিতে স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। তার আগে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী বাছাই করা হতো দেশের সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজসমূহে।
এসব অধিভুক্ত কলেজেও ভর্তি পরিক্ষার মাধ্যমে স্নাতক ১ম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা। তারা জানান, পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হলে মানসম্মত শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। পরীক্ষা না নিয়ে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি নেওয়ার কারণে অনেক ভালো শিক্ষার্থী কলেজে স্নাতক করার সুযোগ পায়না। তাই ভর্তি প্রক্রিয়াটি পুনরায় সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষা বাদ জিপিএর ভিত্তিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ১ম বর্ষে ভর্তি নেওয়া শুরু হয়। তার আগে ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে জিপিএর ভিত্তিতে প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে ভর্তির মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হতো।
আরও পড়ুন: এক বছরের মাস্টার্স তিন বছরেও শেষ হলো না
পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা চালু নিয়ে ফেনীর পরশুরাম সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. কাওসার মিয়া বলেন, মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বোর্ডের চেয়ে জিপিএতে তুলনামুলক এগিয়ে থাকে। যেহেতু জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি নেয়া হয় তাই তারা বেশি ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু দেখা যায় জিপিএ অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে সেরকম ফলাফল পাওয়া যায়না। আবার দেশের সব স্কুল, কলেজের মান সমান না। অনেক সময় ভালো প্রতিষ্ঠানের কারণে দুর্বল শিক্ষার্থীরাও ফলাফলে এগিয়ে থাকে। বিপরীতে মেধাবী হয়েও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনা। এক্ষেত্রে যদি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেয়া হয় তাহলে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়।
ভর্তি পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসাইন বলেন, গত মাসে স্নাতক ১ম বর্ষের ব্যাবহারিক পরীক্ষা নিয়েছি। ভাইভা নিতে গিয়ে প্রাণিবিদ্যার সাধারণ বিষয়গুলো সম্পর্কে তাদের প্রশ্নের জবাব শুনে হতবাক হয়ে গেছি। জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি নেয়াতে অনেক ভালো শিক্ষার্থী সুযোগ পায়না। যদি পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে কিন্তু এই সমস্যাটা তৈরি হবে না। যাচাই করা, ভালো মানের শিক্ষার্থীরা স্নাতক করার সুযোগ পাবে। এতে করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বাড়বে।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ মডেল কলেজের শিক্ষক ও বিএনসিসিও সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হাবিবুর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ভর্তি পরীক্ষা চালু করলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হবে। কারণ বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে সব সময় মেধার মূল্যায়ন করা যায়না।
চট্রগ্রাম সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস হাসান বলেন, আমাদের দেশের পরীক্ষা পদ্ধতিতে সব সময় মেধার সঠিক মূল্যায়ন সম্ভব হয়না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করতে পারেনা। ভর্তির সময় পরীক্ষা নিলে তারা নিজেদেরকে আবার যাচাই করা সুযোগ পায়। এদিক থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়াটা যৌক্তিক বলে মনে করি।
আরও পড়ুন: উদ্বোধনের চার বছরেও চালু হয়নি ফেনী কলেজের ছাত্রী হোস্টেল
ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বিমল কান্তি পালও ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। তিনি বলেন, পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে শিক্ষার্থী ভর্তি করলে স্নাতকে ফলাফল ভালো হয়। এতে করে কলেজের সুনাম যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানও বাড়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আবার ভর্তি পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করতে পারে। তবে জিপিএর ভিত্তিতে যে ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়না এমনটাও না।
ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিলে খাতা কাটা, প্রশ্নের মান ধরে রাখা এসব বিষয় থাকে। আপাতত এ বছর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবেনা। তবে ভর্তির ক্ষেত্রে জিপিএ বাড়ানো হতে পারে। ভর্তি কমিটির সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভবিষ্যতে ভর্তি পরীক্ষা হবে কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা আছে শতবর্ষী কলেজগুলোকে আলাদা করে একটা গ্রুপ করে সেই কলেজগুলোতে ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করা। তবে এটি কবে নাগাদ চালু করতে পারবো সেটি এখনও বলা যাচ্ছেনা।