বাংলাকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই
বিশ্বের প্রতিটি জাতিই নিজের ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন জাতি নেই যারা নিজের এই মাতৃভাষা রক্ষায় জীবন দিয়েছে। সে হিসেবে ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতির জন্য রক্তক্ষয়ী এক ইতিহাসের নাম। ভাষার মাসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন তানভীর আহম্মেদ।
বাংলাকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই
‘শহীদ দিবস’ ছোট্ট একটা শব্দ বটে এর ব্যপ্তি বিশাল। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার জন্য জীবন দেওয়া একমাত্র জাতি বাঙালী। মায়ের ভাষায় কথা বলার যে তৃপ্তি তা আর কোন ভাষায় পাওয়া যায় না তাইতো বাঙলার দামাল সৈনিকরা অকাতরে প্রাণ দিতে দ্বিধাবোধ করে নাই। প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আসলে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত মর্যাদার সাথে শ্রদ্ধাভরে শহীদদের স্মরণ করা হয়।
দুঃখের বিষয় এই আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া ভাষার যে গুরুত্ব, ভাষাকে বিদেশী ভাষা হতে রক্ষা, মর্যাদা রক্ষা করা, বিশ্বে বাংলাকে গর্বের সাথে তুলা ধরা, ভাষার বিকৃতি হতে রক্ষা করা, সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। অথচ, ভাষা আন্দোলনের মূল্য লক্ষ্য ছিল এটিই। তাই তো এটাই বলতে চাই, একুশ আমার অহংকার, পুরো বাঙালি জাতির অহংকার। হাতে হাত কাঁধে কাঁধ রেখে পুরো বাঙালি জাতি বাংলা ভাষাকে বহির্বিশ্বের বুকে সম্মান মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে বাংলাদেশের পেক্ষাপট ঐতিহ্য বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই।
মো. ফাহিম আল হাসান,
ফ্যাকাল্টি অফ ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস
২য় বর্ষ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাভার, ঢাকা।
আরও পড়ুন: হিমেলের নামে ভবনের নামকরণ করল সহপাঠীরা
বাংলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের নিতেই হবে
মানুষের ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ভাষা। বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এটি রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পথটা এতো সহজ ছিলো না। কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে বাংলা ভাষা পেয়েছে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা ভাষা। কিন্তু, আজকের বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে তার ব্যবহার ও প্রচলন হয়নি। ব্যবসায় বাণিজ্য, অফিস আদালত, উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্হায় বাংলা ভাষাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা যদি জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসন লাভ করতে চাই তাহলে উচ্চতর পর্যায়ের বইগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বিদেশি ভাষার প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মাতৃভাষায় জ্ঞানচর্চা করা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর প্রতি ভালোবাসা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য।
উন্নত দেশ যেমন, চীন,জাপান, ফ্রান্স এর মতো আমরাও মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাসহ জীবনের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারি। আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি আমরা বাঙালিরাই প্রথম জাতি, যে জাতি পৃথিবীতে তাদের মাতৃভাষাকে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল,, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলো, সে রক্ত বৃথা যায়নি,পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। তাই, বাংলাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব আমাদের নিতেই হবে।
সাকলাইন সাইফুল্লাহ,
২য় বর্ষ, রসায়ন বিভাগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ ও শুদ্ধ ব্যবহার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে
ভাষা প্রত্যেকটা মানুষের আত্মপরিচয় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাঙ্গালির আত্নপরিচয়ের দিন। এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা রক্তের বিনিময়ে রচিত হয়েছিল ভাষা আন্দোলনের গৌরবপূর্ণ ইতিহাস। পৃথিবীর বুকে বাঙ্গালি একমাত্র জাতি যাদের আত্মপরিচয়কে জয় করার গৌরব রয়েছে এবং পুরো বিশ্ববাসী শ্রদ্ধাভরে প্রতিবছর পালন করে। ইউনোস্কো দিয়েছে আন্তর্জাতিক মর্যাদা। তাই বাঙ্গালী হিসেবে "একুশে ফেব্রুয়ারি" এই দিনটি আমার কাছে ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ।
যেহেতু এইদিনটিতে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে পেয়েছিলাম, তাই এই দিনটিতে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে পেয়েছিলাম। তাই এইদিনে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি রেখে আমাদের সকলের উচিত বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ ও শুদ্ধ ব্যবহার করার। বাঙ্গালী হিসেবে আমার চাওয়া সকল বাংলা ভাষাভাষী শুদ্ধ বাংলা চর্চা করুক এবং বাংলার সাথে বিভিন্ন ভাষা মিলিয়ে যে ত্রুটিপূর্ণ ভাষার ব্যবহার হচ্ছে তা বন্ধ হোক।
তমালিকা রায়,
চতুর্থ সেমিস্টার, গণিত বিভাগ।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
আরও পড়ুন: মাইক ব্যবসায়ীর ৮ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ নিয়ে গড়িমসি ছাত্রলীগের
একুশ সকল অপশক্তিকে বারবার রুখছে, এখনো রুখবে
২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির পরিচয়চিহ্ন। তবে, এটি তো এককথায় বলার বিষয় নয়। একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা বিভিন্নভাবে আমাদের ভিত্তি নির্মাণ করেছে। ভাষা আন্দোলন আমাদের দেশের ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক বটে, যা তখনকার রাজনীতির ধারাকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকেই দেশের বড় বড়, তীব্রতর আন্দোলন হয়েছে এই আন্দোলনের সূত্র থেকেই। অভ্যুত্থানও হয়েছে। তাই, একুশকে শুধু ভাষা আন্দোলনের দৃষ্টিতে দেখলে ভুল হবে। এটা ছিল গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অংশ, অধিকার আদায় আর স্বাধীন বাংলাদেশের পটভূমি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ আর বাংলার নিজস্ব ভাষার মধ্যে বাঙালির পরিচয় বহনে একুশ ছিল মাইলফলক। একুশের মধ্যে আমরা বাঙালি সত্তাকে খুঁজে পাই। দুনিয়াজোড়া ইতিহাসেও দেখা গেছে, ধর্মীয় অনুভূতি বা শ্রেণিচেতনার চেয়েও অনেক বেশি প্রবল ও আবেগ সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে জাতীয় সাংস্কৃতিক অনুভূতি। একুশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য এখানেই। একুশের মিছিল, একুশের স্লোগান, একুশের গান সকল অপশক্তিকে বারবার রুখেছে, এখনো রুখবে।
প্রজ্ঞা লাবণী গোলদার,
ভেট সায়েন্স এন্ড এনিমেল হাজবেন্ড্রি বিভাগ,
৪র্থ বর্ষ, ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজ