বরাদ্দ ও দপ্তরবিহীন এক কার্যালয়
কাজের জন্য বরাদ্দ নেই। নির্ধারিত কক্ষ নেই। আইনে নির্ধারিত কাজ উল্লেখ নেই। শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ নেই। নেই সতর্কতামূলক সভা-সেমিনার। এমন অনেক অপূর্ণতা নিয়েই টিকে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরাও জানেন না তাদের কাজ। শিক্ষার্থীরাও জানেন না কাউন্সেলিং বা পরামর্শের জন্য কার কাছে যাবেন। এ যেন ‘ঢাল-তলোয়ারবিহীন’ এক কার্যালয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ দপ্তরের পরিচালক উপাচার্যের নিয়ন্ত্রণে থেকে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ও শিক্ষা বহির্ভূত বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ প্রদান ও তত্বাবধান এবং সার্বিক কল্যাণে কাজ করবে। আর অন্যান্য দায়িত্ব ও ক্ষমতা সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে নির্ধারণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে এ পর্যন্ত কোনো সিন্ডিকেটে এ কার্যালয়ের দায়িত্ব ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানা যায়। এদিকে এ দপ্তরের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ‘ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়’ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরি ও বিভিন্ন জায়গায় এ দপ্তরের নাম ‘ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়’ লেখা হয়। এ বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ রূপ নেবে করোনাভাইরাস: ড. বিজন
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে কার্যালয় থাকলেও এ দপ্তরের জন্য নির্ধারিত কোনো কক্ষ নেই। বর্তমান পরিচালক ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমানের জন্য বিভাগ থেকে বরাদ্দকৃত কক্ষেই এ দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। এছাড়া কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো ধরনের অর্থ বরাদ্দ নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য সতর্কতাম‚লক কোনো সভা-সেমিনারের আয়োজনও এ পর্যন্ত করা হয়নি। এদিকে এ দপ্তরের মূল কাজ শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করা হলেও নেই আলাদা কোনো বিশেষজ্ঞ। ফলে শিক্ষার্থীরাও জানেন না যে, কাউন্সেলিং এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি দপ্তর রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ঢাল-তলোয়ারবিহীন যুদ্ধ করার মতোই এ দপ্তরের বর্তমান অবস্থা।
লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. আতিকুজ্জামাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করার জন্য এমন একটি দপ্তর রয়েছে তা আমার মতো অনেকেরই অজানা। কোনো সভা-সেমিনার হতেও আজ পর্যন্ত দেখলাম না। করোনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে আত্মহত্যাও করেছেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক সাপোর্ট এর প্রয়োজন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ এসব বিষয়ে নজর দেয়া।
আরও পড়ুন: এবার যবিপ্রবির ল্যাবে ৩ জনের ওমিক্রন শনাক্ত
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এ কার্যালয়ের জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নেই। তবুও প্রশাসন থেকে আপাতত আমার বিভাগের কক্ষে কাজ চালিয়ে নেয়া জন্য বলা হয়েছে। আমরা সেটাই করছি। আর এ দপ্তরের জন্য আলাদা বরাদ্দও নেই। এ জন্য বিভিন্ন প্রোগ্রাম হাতে নিতে সমস্যা হয়। তবে আমরা কিছু চাহিদা দিয়েছি। প্রশাসন থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা সার্ভিস রুলস করার কাজ করছি। যেন কার কি কাজ সেটা উল্লেখ থাকে। আর বর্তমানে কক্ষ খালি নেই। এজন্যই এ দপ্তরের পরিচালককে তার বিভাগের কক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বরাদ্দের বিষয়ে আবেদন এসেছে। এটা অর্থ কমিটির সভায় উঠার কথা।’ এছাড়া মনরোগ বিশেষজ্ঞের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবনা দিলে আমরা নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করবো। অথবা কুমিল্লা শহর বা অন্য কোনো জায়গা থেকে সেবা নেয়া যেতে পারে।’
আরও পড়ুন: ৮৯ বছর বয়সে পিএইচডি অর্জন
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, ‘এ দপ্তরের কাজ মূলত শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্বিকভাবে সহযোগীতা করা। সে বিষয়ে আমি কাজ করতে বলেছি। আর নীতিমালা প্রয়োজন হলে সেটা আগামী সিন্ডিকেট এ আলোচনা করা হবে। বিভিন্ন খাত থেকে আমরা সহযোগীতা করছি। ঐ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ প্রয়োজন হলে দেয়া হবে।’ শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং এর জন্য কোনো বিষেশজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ এখন নেই। কিন্তু একসময় হবে। আমরা কিছু সভা সেমিনার করার চিন্তা করেছি। আইকিউএসি থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।’