অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির নম্বর নিয়ে বিপাকে জবি শিক্ষার্থীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির নাম্বার নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ কিছু বিভাগে সবাইকে দশে দশ দিলেও অধিকাংশ বিভাগই অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির নাম্বার নিয়ে ঝামেলা করছে। কিছু কিছু বিভাগে তো ঢালাওভাবে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির জন্য শূণ্যও দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এইদিকে কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে অনলাইন ক্লাসের উপস্থিতির উপর ইচ্ছা মাফিক নম্বর দিচ্ছেন। অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির এ নম্বরে অসন্তোষ শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন- ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ হবে এসএসসির ফল
গত বছর ৯ মে একাডেমিক কাউন্সিলে ক্লাসের উপস্থিতির পরিবর্তে ক্লাস পারফরম্যান্স এর উপর নম্বর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাউন্সিলের নিয়ম অনুসারে ১০% ক্লাস উপস্থিতি নাম্বার এর পরিবর্তে ক্লাস পারফরম্যান্স যুক্ত হয়েছে। তবে সেই সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা করছে না কয়েকটা বিভাগ। ক্লাসে উপস্থিতির ওপর এ নম্বর পরীক্ষার ফলাফলের সাথে যোগ হওয়ায় চূড়ান্ত ফলাফলের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
সেমিস্টারের প্রতিটি ১০০ নম্বার কোর্সের ৩০ নম্বর সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষক সরাসরি মূল্যায়ন করেন। কোর্স শিক্ষক শিক্ষার্থীর মিডটার্ম, এসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, ক্লাসে উপস্থিতি ইত্যাদি যাচাই করে তার ওপর এ নম্বর দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে বিভাগ ভেদে ৫ বা ১০ নাম্বার বরাদ্দ থাকে ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির ওপর।
করোনা ভাইরাস সংকটে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় বন্ধ হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। তবে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে সে বছরের জুন থেকে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গ্রামে দুর্বল নেটওয়ার্ক, উচ্চমূল্যের ডাটাপ্যাক এবং ডিভাইস জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী। ফলে উপস্থিতির ওপর বরাদ্দকৃত এ নম্বর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন- জাল ভোট ঠেকাতে গিয়ে কোপ খেলেন গোলাম রাব্বানী
নাম গোপন রাখার শর্তে পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, অনলাইনে ক্লাস করার মতো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আমার বাড়িতে কখনো পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরতলীতে এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে ক্লাস করেছি। ক্যাম্পাস খোলা থাকাকালীন আমি উপস্থিতির ওপর প্রায়ই পুরো নম্বর পেয়েছি। অথচ এখন আমি নম্বর কম পাচ্ছি। অনেকে এক, দুই করেও পেয়েছে।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে সন্তান। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী এসব শিক্ষার্থীদের পক্ষে উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা সম্ভব হয়না। সেখানে অনলাইন ক্লাসের ওপর মার্কিং করে তাদেরকে বঞ্চিত করা হবে।
এদিকে সমস্যাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত সাতজন বিভাগীয় প্রধানের সাথে কথা হয়েছে। আপদকালীন এ সময়ে ক্লাসে উপস্থিতির ওপর নম্বর নিয়ে কেন্দ্রীয় কোন নির্দেশনা না থাকায় একেক বিভাগ একেকরকম কথা বলছে। কেউ বলছেন, এটি কোর্স শিক্ষকের ওপর নির্ভর করছে তিনি কিভাবে এ নম্বর মূল্যায়ন করবেন। আবার কোনো বিভাগ নিজেরা আলোচনা করে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতির একটি সর্বনিম্ন মান ধরে মূল্যায়ন করতে বলেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা যায়, গত ৯ মে একাডেমিক কাউন্সিলের ৪৮তম সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে Rules & Regulations for Bachelor’s Degree এর ধারা নং-১২ Rules & Regulations for Master’s Degree এর ধারা নং-১৩ এবং Rules & Regulations for Degree of Master of Philosophy (M.Phil) এর ধারা নং-৬ পরিবর্তন করার জন্য সুপারিশ করা হয় পরবর্তীতে ১৬ মে তা সিন্ডিকেটের ৮০ তম সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয় ।
আরও পড়ুন- গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েও প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের ৫ নেতা
এবিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.শেখ গিয়াস উদ্দীন প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা নেই। কেউ যদি ক্লাসে উপস্থিত না থাকতে পারে তাহলে তাকে নম্বর কিভাবে দিবো? প্রযুক্তিগত সমস্যার কথা বললে তিনি বলেন, ক্লাসের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলে সে কারো কাছ থেকে শেয়ার করতে পারতো কিন্তু কেউ যদি তা না করে সে নম্বর পাবে না এটা স্বাভাবিক।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, আমার কাছে এখনো কেউ সমস্যা নিয়ে আসেনি। সমস্যা নিয়ে আসলে দেখবো।