নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাতে ইইই বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ফটো

প্রতিকূল আবহাওয়া এবং নেটওয়ার্কজনিত সমস্যা দেখিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এমএসসি সেকেন্ড সেমিস্টারের অনলাইন পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর স্থগিত করা হয়েছে। এতে দূর্ভোগে পড়েছেন ব্যাচটির শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, কোভিড-১৯ শুরুর আগেই এমএসসি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরু হয়। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত ২০ মাসেও শেষ হয়নি এই সেমিস্টার৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের পর গত ৩ অক্টোবর এমএসসি ২য় সেমিস্টারের (কোর্স কোড ৫২০১) এডভান্স ভিএলএসআই কোর্সের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা দেয়। তবে, এতেও শিক্ষার্থীরা বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা দেয় এবং খাতা সাবমিট করেন। কিন্তু, পরীক্ষা শেষে বিভাগটির সেই ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হয়ে যাওয়া পরীক্ষাটিও বাতিল করে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়। এমনকি কবে কখন এই পরীক্ষা নেওয়া হবে এবিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। এতে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিভাগটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, নতুন উপাচার্য যোগদানের পর দীর্ঘদিনের সেশনজট দূর করার লক্ষ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সকল বিভাগ পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করে। কিন্তু ঠিক এই মুহুর্তে উপাচার্যের এই প্রশংসিত কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কিছু শিক্ষক এমএসসি ২য় সেমিস্টার পরীক্ষা স্থগিত করে। এমনকি উক্ত সেমিস্টারের একটি পরীক্ষা শেষ হয়ে ছাত্রছাত্রীর উত্তরপত্র জমাদানের পরেও সেই পরীক্ষা অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে পরীক্ষা কমিটির কতিপয় শিক্ষক। অথচ একাডেমিক কাউন্সিল পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে সেই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৮ সালের পরীক্ষা ২০২১ এর শেষে এসেও দিতে পারছি না। করোনার পূর্বেই প্রথম সেমিস্টার শেষ করলেও এখনো দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ হয়নি। যখন পরীক্ষা শুরু হলো ঠিক তখন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কথা বলে আমাদের হওয়া পরীক্ষা স্থগিত করেছে বিভাগটি। তিনি আরও বলেন, কেন বন্ধ করা হলো এ বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের সাথে সন্তোষজনক আচরণ করেন নি। আমরা চাই অনলাইনেই যত দ্রুত সম্ভব আমাদের পরীক্ষাটা নিয়ে নেওয়া হোক।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক জোয়ার্দার জাফর সাদিক বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন মারাত্মক রকমের ঝড় এবং বৃষ্টি হয়। এতে শিক্ষকরাও আটকা পরে এবং পরীক্ষার পুরো সময়টা ব্ল্যাকআউট ছিল। এতে শিক্ষার্থীদেরও ফ্রিকোয়েন্ট ইন্টারাপশন হচ্ছিলো। দেড় ঘন্টার পরীক্ষার মধ্যে ১ ঘন্টা যদি এ রকম অবস্থায় থাকে তাতে পরীক্ষাটা এভাবে ক্যারি ফরওয়ার্ড করাটা ঠিক হবে না। এ কারণেই মূলত আমরা পরীক্ষাটা বন্ধ করেছি।

একটি পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর সেই পরীক্ষা স্থগিত করাটা কতটুকু আইনসিদ্ধ এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনলাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটি হতে পারে৷ পরীক্ষার ইনভিজিলেটর এবং সেই কোর্সের শিক্ষকই এই আবেদন করেছেন। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার দিনেই তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা কমিটির মিটিংয়ের মধ্যে সকল সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীতে কবে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে এবিষয়ে তিনি বলেন, আমরা খুব দ্রুতই এবিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

এবিষয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টা সম্পর্কে আমাকে জানানো হয়েছিল। আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। পরীক্ষা চালানো বা না চালানোর বিষয়টা মূলত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরীক্ষা কমিটির উপর নির্ভর করে৷ আমি তাদের সাথেই বিষয়টা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছি। তবে, যে পরীক্ষাটা হয়ে গেছে সেটা বাদে বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, পরীক্ষা বন্ধের বিষয়টি ইইই বিভাগ চিঠির মাধ্যমে আমাদেরকে জানিয়েছে। পরীক্ষা নেওয়া বা বন্ধের বিষয়টি একাডেমিক কমিটি এবং পরীক্ষা কমিটি দেখে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শুধু অনুমোদন দেয়।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা যেহেতু নতুন একটা সিস্টেম তাই এধরণের সমস্যা নতুন এবং এজাতীয় কোন নীতিমালা প্রণয়ন হয়নি। এ কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে এব্যাপারে মতামত দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। এর পুরো বিষয়টিই সংশ্লীষ্ট বিভাগ এবং একাডেমিক কমিটি দেখবে।


সর্বশেষ সংবাদ