হলে যাওয়া ছাড়া ‘প্রশ্নের ধরন-মানবন্টন’ জানতে পারছে না শিক্ষার্থীরা

পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর সাত কলেজের অনেক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের ধরন-মানববন্টন সম্পর্কে জানতে পারছেন। এর আগে তারা তাদের শিক্ষকদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেও শিক্ষকরা সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছেন না
পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্ন হাতে পাওয়ার পর সাত কলেজের অনেক ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা প্রশ্নের ধরন-মানববন্টন সম্পর্কে জানতে পারছেন। এর আগে তারা তাদের শিক্ষকদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেও শিক্ষকরা সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছেন না  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ কমে আসার পর শ্রেণি পাঠদান শুরু না হলেও স্থগিত থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ। কিছু কিছু পরীক্ষা ইতিমধ্যে চলমান রয়েছে এবং কিছু পরীক্ষা শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এসব পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা বলছেন, কলেজগুলোর জন্মলগ্ন থেকে সমস্যা লেগেই আছে। তাই বলে পরীক্ষার হলে গিয়ে ‘প্রশ্নের ধরন’ সম্পর্কে জানতে হবে এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। প্রশ্নের ধরন কিংবা সিলেবাস, মানবন্টন- এসব সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে আসলে প্রস্তুতিটাও সেভাবে গোছালো হয়ে উঠে না। পরে দেখা যায়, ফল প্রকাশিত হলে সবাই গণহারে অকৃতকার্য হচ্ছে।

আবু তালেব কবি নজরুল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের (২০১৭-১৮) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলতি মাসের ০৯ তারিখ থেকে তার পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনি ‘প্রশ্নের ধরন-মানবন্টন’ সম্পর্কে না জেনেই পরীক্ষার হলে গিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষা ৪ ঘণ্টা হওয়ার কথা থাকলেও করোনাকালীন সময় কমিয়ে ২ ঘণ্টায় পরীক্ষা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের পরীক্ষার মানবন্টন পরিবর্তন হয়। তবে নতুন মানবন্টন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু না জানিয়েই রুটিন প্রকাশ করেছে। পরে নিজ নিজ ডিপার্টমেন্ট থেকে পরীক্ষার মানবন্টন সম্পর্কে যেনে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু আমরা ডিপার্টমেন্টের একাধিক শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করেও এই বিষয় কোনো উত্তর পাইনি।’’

পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন তিনি। আবু তালেব বলেন, ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করলে তারা জানান যে তারা এই বিষয় কিছুই জানেন না। পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়ার পরেই মানবন্টন সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমাদের পরীক্ষার মানবন্টন হচ্ছে ৫টি প্রশ্নের মধ্যে ৩টির উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের মান ২৬.৬৭ এবং প্রতিটি প্রশ্ন ক, খ, গ অংশে বিভক্ত থাকে। আবার কোনোটায় ক, খ অংশও থাকে।

পড়ুন: ৪০ মার্কের প্রস্তুতি, পরীক্ষা হলো ৮০ নম্বরের

যাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে তারাও বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত। ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম তাসনিয়া সুহিতার আগামী অক্টোবর থেকে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু তিনিও এখনো পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত নন।

তিনি বলেন, অন্যান্য কলেজে কিংবা আমাদের কলেজের অন্য বিভাগের খবর বলতে পারবো না। আমি যদি আমার কলেজের আমার বিভাগের কথাই বলি, এখানে কোনো ক্লাসই হয়নি বলতে গেলে। করোনার মধ্যে দু’জন টিচার ৩/৪টা ক্লাস নিয়েছেন। এরপর আর কোনো ক্লাস হয়নি। এখন ইয়ার ফাইনলা পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের সিলেবাস কিংবা মানবন্টন কোনটি সম্পর্কে কোন কিছুই জানতে পারিনি।

এ বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান রওশন আরা বেগম হ্যাপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনা ধকল কাটিয়ে উঠতে শিক্ষার্থীরা এমনি হিমশিম খাচ্ছে। আমরা তাদের খারাপ অবস্থা বুঝি। তাদের কথাগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়গুলো সমাধান করতে। পরীক্ষার এখনো বেশ কিছুদিন বাকি রয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণের সময় তাদের একটা প্রস্তুতিমূলক ক্লাস নেবো। সেখানে তাদের পরীক্ষা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারণা দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন সরকারি বাঙলা কলেজ অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহীন সরদারও। তিনি বলেন, ১ম বর্ষের প্রশ্ন অনুযায়ী পরীক্ষা হলে নতুন করে এসব বিষয় সামনে আসতো না। শিক্ষার্থীরা আগের বছরের মতো প্রস্তুতি নিতো। কিন্তু এবারে করোনার কারণে পরীক্ষার সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে শুনেছি। তাই প্রশ্নের ধরন এবং নতুন মানববন্টন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা হচ্ছে।

শাহীন বলেন, এ বিষয়ে কলেজ কিংবা ডিপার্টমেন্ট থেকেও আমাদের কিছু জানানো হচ্ছে না। এদিকে ক্লাস শুরুর তো এখনো কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগের ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হলে আমাদেরও হয়তো রুটিন দিয়ে দেবে। বন্ধুদের কাছে জানতে পেরেছি ২০ মার্ক করে ৪টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, সময় ২ ঘণ্টা দেওয়া থাকবে। আবার ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্টে দেখি ১.৫ ঘণ্টাতেও পরীক্ষা হতে পারে।

অবশ্য সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মহিউদ্দিন সরকার এসব কিছুতে কর্ণপাত করতে চান না। তিনি পড়াশোনায় বিশ্বাসী। একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন হাতে পেয়ে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে অবগত হতেও প্রস্তুত রয়েছেন। তিনি বলেন, যে যাই বলো না কেন পরীক্ষার হলে যাওয়া পর্যন্ত মানবন্টন কত হবে সেটা কেউই ঠিক করে বলতে পারবে না।

মহিউদ্দিন বলেন, কেউ বলবে ৫টা, কেউ বলবে ৬টা আবার কেউ বলবে আগের মতো। এটা পরীক্ষার হলে গিয়েই বোঝা যাবে। আমরা আগের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। যতটুকু প্রস্তুতি থাকবে, ততটুকু লিখে দিয়ে চলে আসবো।

বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেক কলেজের ডিপার্টমেন্টগুলোর কর্তা ব্যক্তিদের দুষলেন সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ক (ফোকাল পয়েন্ট) ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে জানতে হবে- এমনটি কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রত্যেক কলেজের ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের অভাবে কারণে এটি হতে পারে। করোনায় সেভাবে শ্রেণি পাঠদান করা সম্ভব হয়নি বিষয়টি সবার মাথায় রাখা উচিৎ।

অধ্যাপক আইকে সেলিম বলেন, তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলোরও যৌক্তিকতা থাকতে হবে। একটা বিভাগের ৮০ নম্বরের পরীক্ষা কোনভাবেই ৪০ নম্বরে নেওয়া সম্ভব না। কারণ এটি হলে তাদের ক্রেডিট কমে আসবে। এটা শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি। অন্যদিকে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের সেভাবেই প্রস্তুত হতে হবে, যাতে করে প্রশ্ন যেভাবে যতটাই আসুক না কেন, তারা যেন উত্তর করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ