ঢাকা কলেজ

প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তবু শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে বাড়তি পরিবহন ফি

ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে বাড়তি পরিবহন ফি
ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে বাড়তি পরিবহন ফি  © টিডিসি ফটো

করোনা মহামারীর কারণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা কলেজ। তবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ঠিকই আদায় করা হয়েছে পরিবহন ফি। উল্টো পূর্বের পরিবহন ফি ২৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলছেন, করোনাকালে পরিবহন সেবা না দিয়েও তাদের থেকে পরিবহন ফি আদায় করা এবং বৃদ্ধি করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

কলেজের গত ছয় বছরের পরিবহন ফি আদায় সংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই চার বছর প্রতি শিক্ষার্থী থেকে পরিবহণ ফি বাবদ ২৫০ টাকা আদায় করা হতো৷ কিন্তু ২০২০ সালে সেটি বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে৷

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতি বছর নিজ নিজ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বে শিক্ষার্থীদেরকে সব ধরনের ফি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই পরিবহন ফি জমা দিয়েই ফরম পূরণ করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। 

অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কলেজে বর্তমানে মোট ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। শিক্ষার্থী প্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করলেও এক বছরেই তা কোটির অঙ্কে পৌঁছাবে। পরিবহন সেবা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের থেকে এই বিপুল টাকা আদায় করা হচ্ছে।

বর্তমানে ঢাকা কলেজের পরিবহন পুলে শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য বাস রয়েছে মোট আটটি। যার মধ্যে চারটি গত বছরের ১৫ মার্চ মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির মোল্লার পক্ষ থেকে উপহার পাওয়া৷ নতুন এই চারটি বাস ঢাকা কলেজের পরিবহন পুলে যুক্ত হওয়ার দুই দিন পরেই করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে নতুন এসব বাস শিক্ষার্থীদের জন্য আর ব্যবহৃত হয়নি।

কিন্তু গত বছরের ২১ ডিসেম্বর কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ও বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম মইনুল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিবহন ফি বাড়িয়ে ৫০০ টকা করা হয়৷ এরপর কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকারও উক্ত ফি বহাল রেখেছেন।

পরিবহন ফি বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এ.টি.এম মইনুল হোসেন বলেন, বাসের অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবহন ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন করোনাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পরিবহনে যেখানে কোন খরচই হয়নি সেখানে বাড়তি পরিবহন ফি আদায় সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী হাসিব বিল্লাহ বলেন, করোনাকালীন সময়ের সবার আর্থিক দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে পরিবহন ফি মওকুফ করা প্রয়োজন। একইসাথে যে অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটিও কমিয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় আনা দরকার। কেননা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবহন চলাচলের সম্পূর্ণ ব্যয় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। বরং এই খাতে ভর্তুকি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের উচিত সরকারের কাছে আবেদন জানানো।

আরেক শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, করোনাকালীন সময়ের কথা বিবেচনা করে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ফি মওকুফ করেছে। যেহেতু আমাদের শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন সেবা পায়নি, তাই প্রশাসনের উচিত স্বপ্রণোদিত হয়ে পরিবহন ফি মওকুফ করা।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, জ্বালানি খরচ ছাড়াও আমাদের স্থায়ী কিছু খরচ আছে৷ গাড়ি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, মবিল পরিবর্তন করতে হয়৷ মূলত এজন্যই ফি নেওয়া হচ্ছে৷ যেসব ফি নেয়া হয়েছে সেগুলো মওকুফ করার সুযোগ নেই৷

শিক্ষার্থীরা দাবি জানালে ফি কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তো ছাত্রাবাসের অনেক ফি মওকুফ করে দিয়েছি৷ দাবি আসলে এই বিষয়টিও আমরা বিবেচনা করবো। তবে এটা করা আমাদের জন্য কঠিন হবে৷


সর্বশেষ সংবাদ