হল খুলে সশরীরে পরীক্ষা চায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে সেশনজট নিরসন ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখতে আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সশরীরে পরীক্ষা। গত বুধবার (১৮ আগস্ট) ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের সাথে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার হয়।
ইতোমধ্যেই পরীক্ষার রুটিনও প্রকাশিত হয়েছে। শুরুতেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্নাতক ২য় বর্ষের অনিয়মিত, মানোন্নয়ন ও বিশেষ (অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন) পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে পরবর্তীতে অন্যান্য বর্ষের রুটিনও প্রকাশিত করা হবে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে সাত কলেজের অসংখ্য আবাসিক শিক্ষার্থী। হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় ঢাকায় এসে থাকার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
পড়ুন: সেপ্টেম্বরে সশরীরে শুরু সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষা
তথ্যমতে, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজে আবাসিক হল রয়েছে। সব মিলিয়ে এই কলেজগুলোর আবাসিক হলে প্রায় ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন।
পড়ুন: টিকা না দিয়ে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ সাত কলেজের
শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘ দিন বাড়িতে থাকার ফলে এখন এত কম সময়ে ঢাকায় এসে বাসা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এরপর আবার অনেকের আর্থিক সংকটও রয়েছে। হঠাৎ করে ঢাকায় এসে মেসে উঠার সামর্থ্যও নেই অনেক শিক্ষার্থীর। সবথেকে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দুই কলেজে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা সব থেকে বেশি। শিক্ষার্থীদের বলছে, অন্তত যে সকল শিক্ষার্থীর পরীক্ষা রয়েছে শুধু মাত্র তাদের জন্য আবাসিক হলে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার।
ঢাকা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী তাকদীর রহমান বলেন, পরীক্ষা শুরুর মাত্র দশ দিন আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে সশরীরে পরীক্ষা হবে। এখন আমরা ঢাকায় এসে থাকার জায়গা খুঁজবো নাকি পড়ালেখা করবো? এটি একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। অন্তত যাদের পরীক্ষা আছে তাদের জন্য হল খুলে দেওয়া হলে থাকার জায়গা নিয়ে চাপের মধ্যে থাকতে হবে না।
ইডেন মহিলা কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারিয়া আঞ্জুম বলেন, আমাদের কথা চিন্তা না করেই সশরীরে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিলো প্রশাসন। আমরা ঢাকায় এসে থাকবো কোথায়? মেয়ে মানুষ তো আর যেখানে সেখানে থাকতে পারে না। হুট করে কোন আত্মীয়ের বাসায়ও উঠা যায় না। আর সবার তো আর ঢাকাতে আত্মীয়ও নেই। মেসে উঠতে গেলেও অনেক টাকার প্রয়োজন। অনেকের অর্থিক অবস্থা খারাপ। আমাদের যাদের পরীক্ষা রয়েছে তাঁদের জন্য হল খুলে দিলে হবে।
তবে সাত কলেজ প্রশাসন বলছে, আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি তাঁদের একার নয়। সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই সরকারের নির্দেশনার আগে আবাসিক হল খোলার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করেই আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘হল খোলা সম্ভব না। আর ওইভাবে ফিক্সড করে শিক্ষার্থীদের হলে তোলা যাবে না। কারণ একটা রুমে একাধিক শিক্ষার্থী থাকে। এমন যদি হত সিঙ্গেল রুম যাদের পরীক্ষা তারা তাদের রুমে থাকবে। পরীক্ষা শেষ হলে আবার চলে যাবে। আমাদের তো আর এক রুমে একজন থাকে না। এই কোভিডে এটা একদমই এলাউ করা যাবে না। অন্তত যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া শেষ না হচ্ছে।’
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই সিদ্ধান্ত আসার আগেই আবাসিক হল খোলা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে জানালেন সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার।
পড়ুন: অর্ধেক সময়ে হবে সাত কলেজের পরীক্ষা
তিনি বলেন, হল খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় পরামর্শক কমিটি গ্রহণ করতে পারে। তাঁরা যখন আমাদেরকে হল খোলার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করবে তখনই আমরা হল খুলতে পারবো। এটি আমাদের সাত কলেজ প্রশাসন অথবা আমরা অধ্যক্ষরা কোনভাবেই গ্রহণ করতে পারিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ব্যপারগুলো দেখভাল করছেন। তাঁর নির্দেশনা ছাড়া হল খোলার এখতিয়ার আমাদের নেই।