টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে 

টিকাদান কর্মসূচি
টিকাদান কর্মসূচি  © প্রতীকী ছবি

করোনায় বন্ধ থাকা উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম ফের চালুর ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে টিকাদান কর্মসূচি। প্রথমে শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও এখন সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও জনবলকে টিকা দিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি ও নাম নিবন্ধন করা হচ্ছে। পাশাপাশি তা পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকায় এই কর্মসূচি ঝুলে যেতে পারে। এর ফলে সবাইকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনও বিলম্বিত হতে পারে। এতে দীর্ঘ হতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোর চলমান ছুটি।

দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে শিক্ষার্থী আছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এছাড়া শিক্ষক আছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮২৩ জন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ৪৭ হাজার ৭৬৬ জন। এই প্রায় ৪৭ লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের অনেকেই প্রথম ধাপে টিকা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ইতোমধ্যে ৩০ বছর বয়সী বিভিন্ন ক্যাটাগরির নাগরিকরা টিকা পাচ্ছেন।

অন্যদিকে ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ লাখ ১৩ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী, ৪ হাজার ১০০ শিক্ষক এবং ৮ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামের তালিকা এনআইডিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যদিও প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলেছিল যে, আবাসিক হলে ১ লাখ ৩১ হাজার শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু এনআইডি না থাকায় বাকি ১৮ হাজারকে তালিকাভুক্ত করা যায়নি। যারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন তারা টিকা নিবন্ধনের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারছেন।

শিক্ষা সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে চল্লিশোর্ধ্ব শিক্ষক এবং অন্যান্য জনবল টিকা পেয়েছে। বর্তমানে ত্রিশ বছর বয়সীরা টিকা পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়সী সব শিক্ষার্থীকেই টিকা দেওয়ার চিন্তা করা হয়েছে। এনআইডি থাকলে টিকা সংশ্লিষ্টরা টিকা পাবেন। পাশাপাশি শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও টিকা পাবেন। এখন এ ক্ষেত্রে যদি কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে তবে তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের এনআইডি না থাকলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ইসির কার্যালয়ে গেলে দুদিনের মধ্যে এনআইডি করে দেওয়া হবে।

দেশে বর্তমানে প্রায় দেড়শ সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রায় আড়াই হাজার কলেজ এবং ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১ হাজার ৩৪৬ মাদ্রাসা আছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন পেতে এনআইডি করার নির্দেশনা জারি করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য ইউনিক আইডি তৈরির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে গত ১৫ জুলাই ইউজিসি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও আলাদাভাবে শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে শিক্ষকদের তালিকা পাঠিয়েছি। 

ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দিতে তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মো. জাকির হোসেন জানান, শিক্ষা কার্যক্রম আশু শুরু করার লক্ষ্যে সরকারি সিদ্ধান্তে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আমাদের প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী আছে। তাদের সবারই বয়স ১৮ বছরের বেশি।


সর্বশেষ সংবাদ