কবি নজরুলের কুমিল্লা আগমনের শতবর্ষে কুবিতে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার

ওয়েবিনারে অতিথিবৃন্দ
ওয়েবিনারে অতিথিবৃন্দ  © সংগৃহিত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কুমিল্লায় আগমনের শতবর্ষ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) কবির এ আগমন উদযাপনে অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে ‘চেনা নজরুল, অচেনা নজরুল’ শিরোনামে দু'দিনব্যাপী এ ওয়েবিনারের উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। তিনি বলেন, নজরুল আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে এমন কেউ নেই যারা নজরুলের বিদ্রোহী, সাম্যবাদী, লিচু চোর, রণ সংগীত শুনে নাই। এসব বলতে গেলে কুমিল্লা থেকেই সূত্রপাত।

এ অনুষ্ঠান নজরুল চর্চা ও গবেষণাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, নজরুলকে নিয়ে নানা দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। নজরুল শুধু দুইটি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। নজরুলের রচনাগুলো তো এখন অনুবাদ হচ্ছে। এভাবেই নজরুল সারা বিশ্বে পরিচিতি পাবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র কবি যাকে তার কবিতা নামের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিদ্রোহী কবি বলা হয়েছে।

নজরুলকে বাংলা ভাষার প্রথম এবং শেষ অসাম্প্রদায়িক কবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নজরুল বাঙালিকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। বাংলা ভাষায় বাংলা কবিতায় নতুন একটি স্রোতের সৃষ্টি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, তিনি (কবি নজরুল) বিশ্বসাহিত্যের একমাত্র কবি যিনি এক সাথে বিদ্রোহের কবি, আবার কখনো প্রেমিক কবি, কখনো কখনো প্রকৃতির কবি। এই নজরুলই নিম্নবর্গের যন্ত্রণা বুঝেছিলেন, বুঝেছিলেন ক্ষুধার জ্বালা।

বিশ্বজিৎ ঘোষ তার বক্তব্যে আরও বলেন, নজরুলকে ভাগ করা হচ্ছে কেউ বলে তাকে জাগরণের কবি, আবার কেউ বলে হিন্দুদের কবি। কিন্তু কেউ বলেনা সে মানুষের কবি যা খুবই দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানের বিশেষ আলোচক কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, আসানসোল'র বাংলা বিভাগের প্রধান ড. মোনালিসা দাস বলেন, বিদ্রোহী সত্ত্বা কাজী নজরুলের জীবনে সর্বাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। এই সত্ত্বা তাকে রাজনৈতিক সচেতন করে গড়ে তুলেছিল। কিশোর বয়স থেকেই নজরুলের মনে দেশের স্বাধীনতার প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। সে বয়সেই তিনি এটা চেয়েছিলেন যে, ইংরেজ এ দেশ থেকে বিতাড়িত হোক, দেশ হোক পূর্ণ স্বাধীন।

ড. মোনালিসা আরও বলেন, যে তরুণ সতের বছর বয়সে বাঙালি যুদ্ধযাত্রী সৈনিকদের দেখে আলোড়িত হয়েছিলেন এবং নিজেই যুদ্ধ যাবার সংকল্প করেছিলেন, তার রাজনৈতিক বোধ অত্যন্ত সুদৃঢ়।

এ ছাড়া তিনি নজরুলের রাজনৈতিক ধারা ও তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করেন।

প্রথম দিনের ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান এবং কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুজ্জামান মিলকির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারের সঞ্চালনা করেন একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া আফরোজ।

এতে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাগণও যুক্ত ছিলেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল কুমিল্লা। জাতীয় কবির প্রেম, বিয়ে, প্রকাশ্যে সুরকার-গায়ক ও অভিনয়সহ অনেক কিছুই শুরু হয়েছিল কুমিল্লা থেকে। এখানের বিভিন্ন স্থানে, বাড়িতে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আড্ডা, সংগীতচর্চা ও কবিতা আবৃত্তি করতেন তিনি। পাশাপাশি লিখতেন গান ও কবিতা। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট পাঁচবার কুমিল্লায় এসেছিলেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ