অনলাইনে নয়; সশরীরেই পরীক্ষা দিতে চায় বেরোবির শিক্ষার্থীরা

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর  © ফাইল ছবি

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বিভিন্ন পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়। গতকাল বুধবার (০২ জুন) রাতে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

অফিস আদেশে বলা হয়, গত ১১ মে অনুষ্ঠিত ৩০তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।  সুপারিশক্রমে ৭৮তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

অফিস আদেশ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্নরকম মন্তব্য করে পোস্ট এবং কমেন্টস করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই চান তারা সশরীরে পরীক্ষা দিবেন। অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা এখনো নাই বলে উল্লেখ করছেন তারা। আবার অনেকে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতির সিস্টেমের কথাও বলেছেন। কেউ কেউ অনলাইন অথবা অফলাইন যেকোন সিস্টেমে হোক তবে পরীক্ষা হোক এটাই চেয়েছেন।   

অনলাইনে পরীক্ষার জটিলতার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস তমা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল নেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে গুহার মধ্যে বসে থাকা প্রশাসন কি মেকানিজম দিয়েছে এই পরীক্ষার? ঠিক কোন প্রসিডিওর এ পরীক্ষাটা হবে?’

‘অনলাইনে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত তো অনেক আগেই হয়েছে, ২১ টা বিভাগের কয়টা বিভাগ পরীক্ষা নেয়ার প্রসেস শুরু করেছে? জীবন থেকে আরও ১/২ মাস খেয়ে ফেলার চাইতে ফিজিক্যালি পরীক্ষা দেয়াটা শ্রেয় না? সব বিশ্ববিদ্যালয় নিতে পারলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা কোথায়?’

আরেক শিক্ষার্থী সৌরভ রায় ফেসবুক কমেন্টেস এ বলেছেন, ‘যখন দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সশরীরে পরিক্ষা নিতে আগ্রহী, সেখানে আমরা কেন অনলাইনে পরিক্ষা দিব? তাছাড়া রংপুরে covid19 সংক্রমনের হার দেশের অনান্য বিভাগ হতে কমেই।’

তারিকুল ইসলাম তার কমেন্টসএ বলেন, ‘১১ মে তে নেওয়া সিদ্ধান্ত এখনো থাকবে কেন? তারপর তো ইউজিসি নতুন করে কিছু নির্দেশ দিয়েছে। তারপর কি আরেকটা একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আয়োজন করা যেত না? সব বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সশরীরে পরিক্ষা নিচ্ছে। সেখানে বেরোবির এমন সিদ্ধান্ত স্টুডেন্ট দের জন্য হতাশার। বেরোবির শতকরা ৮০% স্টুডেন্ট এর ভালো মানের ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ নাই। তারা কিভাবে পরিক্ষায় অংশ নেবে?’

সৈকত রায়হান সিয়াম নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম দিতে চাই। ইতিপূর্বে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম দিয়েছি, কেউ আক্রান্ত হয়নি বা কোনো ধরনের কোনো সমস্যাও হয়নি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম নিচ্ছে, আর কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম দেওয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতাও আছে, সেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম নিলেই সবচেয়ে ভালো হবে। অনলাইন এক্সাম বললেই কি নেওয়া যায়? ইন্টারনেটের ধীর গতি, নেটওয়ার্কের সংকটের কারণে অনেকে ঠিক মত অনলাইন ক্লাসও করতে পারে না, অনেকে মাঠে কিংবা বাজারে বসে ক্লাসও করেছে।’

‘কিন্তু অনলাইন এক্সাম হলে তারা কি করবে??? বাজারে কিংবা মাঠে বসে কি তারা এক্সাম দিবে?? প্রশাসনের উচিত এই বিষয়টি ভেবে অনলাইন এক্সাম এর পরিকল্পনা বাদ দিয়ে পূর্বের মত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে এক্সাম নেওয়া। এতে শিক্ষার্থিদের দুর্ভোগও কমবে, আবার পরীক্ষার মন নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো সুযোগও থাকবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থবিধি মেনে সশরীরে পরীক্ষা নিতে চাই।’

অনলাইনে পরীক্ষা কোন সিস্টেমে হবে এর কোন নিয়ম ঠিক হয়েছে কিনা বা কবে নাগাদ এই পরীক্ষা নেওয়া হবে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রিলেটেড সংবাদ:

বেরোবি উপাচার্যের পিএসকে অবরুদ্ধের অভিযোগ তদন্তে কমিটি

সশরীরে পরীক্ষা নিতে ইউজিসির অনুমোদন, যা ভাবছে বেরোবি প্রশাসন

 


সর্বশেষ সংবাদ