‘গোপনে’ সিন্ডিকেট সভা আহ্বান উপাচার্যের, শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন শিক্ষকেরা

বেরোবির লোগো ও উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ
বেরোবির লোগো ও উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ  © ফাইল ফটো

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ কঠোর লকডাউনের মধ্যেও মঙ্গলবার (১১ মে) ‘গোপনে’ সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদ। এই সভায় উপাচার্য অবৈধ গণনিয়োগ দিতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকেরা।

সোমবার (১০ মে) বিকেলে সিন্ডিকেট সভার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ।

চিঠিতে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে উপাচার্যের মেয়াদের শেষ সময়ে রুটিন কাজ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সিন্ডিকেট সভাসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ, উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মেয়াদ শেষ হতে আর ৩৫ দিন বাকি। শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন অপকর্মকে জায়েজ করতে গোপনে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন উপাচার্য।

আরও পড়ুন: মসজিদে ঢুকে নোবিপ্রবির সহকারী রেজিস্ট্রারকে ছুরিকাঘাত

চিঠিতে বলা হয়েছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ যোগদানের পর থেকে ব্যাপক একাডেমিক ও আর্থিক দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ গত ১৩ মার্চ তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। ইউজিসির আরেকটি কমিটি তার সব দুর্নীতির তদন্ত করছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, আগামী ১৪ জুন উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আমরা জেনেছি কঠোর লকডাউনের মধ্যে উপাচার্য আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ মে) ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে সিন্ডিকেট সভা ডেকেছেন। আমরা আশঙ্কা করছি, তার মেয়াদ শেষের আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের মতো অবৈধ গণনিয়োগ দিতে পারেন। এ ছাড়া এরই মধ্যে জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলার আসামিদের বরখাস্ত না করে বরং পুরস্কার হিসেবে উপাচার্য গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রদীপ কুমারকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলাসহ বিদ্যমান সমস্যার আবর্ত থেকে রক্ষা করা জরুরি, এজন্য উপাচার্যসহ সংঘবদ্ধ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং এই আমলের সব অবৈধ নিয়োগ-পদোন্নতি বাতিলসহ চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া ও তার মেয়াদে আসন্ন সব সিন্ডিকেট সভা স্থগিত করা প্রয়োজন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: অসত্য তথ্যে রাবির সাবেক উপ-উপাচার্যকে লিগ্যাল নোটিশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান বলেন, উপাচার্য অনেক অবৈধ নিয়োগ ও পদোন্নতি বৈধ করার জন্য ঈদের দুদিন আগে ছুটি ও কঠোর লকডাউনের মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কলঙ্কিত করার সঙ্গে সরকারকেও বিব্রত করা হবে। সে কারণে আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। উপাচার্য অবৈধ কর্মকাণ্ড যাতে বৈধ করতে না পারেন সেজন্য নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা থেকে বিরত থাকার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছি।

শিক্ষামন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এবং অবৈধ সিন্ডিকেট সভাসহ সব কর্মকাণ্ড বন্ধ করার নির্দেশ দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তবে এ বিষয়ে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সঙ্গে কয়েকবার চেষ্ঠা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ