বেরোবিতে শিক্ষিকা-ছাত্রী ও ছাত্রের ত্রিমুখী অভিযোগ
- বেরোবি প্রতিনিধি:
- প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫ AM , আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ০৯:২৫ AM
ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভুয়া প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগ এনে দুই শিক্ষার্থীর নামে রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনীম হুমাইদা।
গত মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) নিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল তোফায়েল এবং এক নারী শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষিকা। ভুয়া আইডির মাধ্যমে ভুয়া নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জরিপের জন্য টাকা উত্তোলন করে পেশাগত ও ব্যক্তিগত সুনামহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ফাঁসাতে অভিনব নাটক/প্রতারণার অভিযোগ এনে সহকারী অধ্যাপক তাসনীম হুমাইদা এবং তার স্বামী রাজুর বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.নজরুল ইসলাম বরাবর আলাদা আলাদাভাবে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন একই বিভাগের ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল এবং নারী শিক্ষার্থী রাহাতুল জান্নাত।
শিক্ষিকা তাসনীম হুমাইদার অভিযোগ থেকে জানা যায়, তাসনীম হুমাইদার ফেসবুকের প্রোফাইলের ছবি ব্যবহার করে হুবহু তার আইডির মত করে তার আইডির সাথে মেসেঞ্জারে টাকা চাওয়ার একটি ভুয়া কথোপকথনের স্ক্রিনশট তৈরি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল তোফায়েল। এরপর তোফায়েল একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে মেসেঞ্জারে সেই ভুয়া স্ক্রিনশট পাঠায় এবং শিক্ষিকা তাসনীম হুমাইদার নাম করে ওই ব্যাচের সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জরিপের কথা বলে ১০০ টাকা করে উত্তোলন করতে বলে। তোফায়েল কাজটি করার জন্য বারবার ওই নারী শিক্ষার্থীকে মুঠোফোনে কল দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেছে বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, নিজের নামসহ গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৫-২০১৬ সেশনের একজন শিক্ষার্থী এবং বিভাগের একজন শিক্ষকের বিষয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগপত্রে তাসনীম হুমাইদা যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা উল্লেখ করে অভিযুক্ত সেই নারী শিক্ষার্থী রাহাতুল জান্নাত তার অভিযোগপত্রে বলেন, তাসনীম হুমাইদা ম্যাম এর ব্যবহৃত ফেসবুক আইডির (ঞযধংহরস ঐঁসরফধ) মেসেঞ্জার থেকে আমার ব্যবহৃত ফেসবুক (ঔধহহধঃ ঝৎরংঃু) ম্যাসেঞ্জারে মেসেজ করে বলা হয় তার রিসার্চ প্রজেক্ট এর জন্য আমাদের ব্যাচের প্রতিটি স্টুডেন্টকে কন্ট্রিবিউট করতে হবে সেজন্য সবার কাছ থেকে ১০০ টাকা তোলার কথা বরা হয়। আমি তার কথামতো ক্লাস প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাচের সবাইকে জানানোর জন্য ফেসবুক গ্রুপে একটি নোটিশ দেই। পরবর্তীতে গত ৫ এপ্রিল তাসনীম ম্যাম আমাকে জানান তিনি এ ধরণের ম্যাসেজ করেননি। তার আইডি হ্যাক হয়েছে। এজন্য তিনি আমাকে ডিপার্টমেন্টের ফেসবুক গ্রুপে (গঈঔ ঋঅগওখণ) একটি স্ট্যাটাস দিতে বলেন। আমি ম্যামের আইডিকে ট্যাগ করে গ্রুপে পোস্ট দেই, যা এখনো বিভাগের গ্রুপে রয়েছে এবং ম্যাম নিজেও তার ফেসবুক টাইমলাইনে আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন।
এরপর গত ১২ই এপ্রিল বাসায় ডেকে জোরপূর্বক তার ফোন কেড়ে নিয়ে ফোনের লক খুলে ল্যাপটপের সাথে কানেক্ট করে ডাটা চুরি করার পাশাপাশি জান্নাতকে ম্যাসেঞ্জারে তার (শিক্ষিকার) পাঠানো বিভিন্ন কথোপকথন শিক্ষিকা তাসনীম হুমাইদা ডিলেট করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন এই নারী শিক্ষার্থী ।
অন্যদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল তার অভিযোগে বলেছেন, গত ১৪ এপ্রিল তারিখে গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানতে পারি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনীম হুমাইদা আমার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে তার নাম ব্যবহার করে ভুয়া নোটিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জরিপের জন্য টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ দিয়েছেন। এই অভিযোগ আমি বেরোবির একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের কাছ থেকে জানতে পারি। পরে তার কাছ থেকে গত ১৩ এপ্রিল তারিখে তাসনীম হুমাইদার দেয়া অভিযোগপত্রটি সংগ্রহ করি এবং সেখানে তাসনীম হুমাইদা গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১ম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ কাল্পনাপ্রসূত, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি মনে করি আমার প্রতি তার ব্যক্তি আক্রোশের ফল হিসেবে তিনি এটি করেছেন। এ ঘটনার সাথে আমার নূন্যতম কোন সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি ওই শিক্ষার্থীর সাথে আমি কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি সে আমার সম্পর্কে এমন কোন কথা তাসনীম হুমাইদাকে বলে নি।
এবিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে এমন অভিযোগের বিষয়ে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখন ক্যাম্পাস বন্ধ তাই ক্যাম্পাস খোলার পরে বিভাগের একাডেমিক কমিটির মাধ্যমে আমাদেরকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’