হল ভাড়া মওকুফ ও টিউশন ফি কমানোর দাবি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা কলেজ
ঢাকা কলেজ  © ফাইল ফটো

করোনা মহামারীর মাঝেও পরীক্ষা ফি, কলেজে ভর্তি, সেশনচার্জ, হলচার্জসহ মোটা অংকের টাকা চেপেছে শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে। একদিকে হল বন্ধ অন্যদিকে পরীক্ষা আসন্ন। তাই বাধ্য হয়ে ঢাকা ফিরে উঠতে হচ্ছে মেসে। যার ফলে হঠাৎ করেই সব কিছুর অর্থ যোগান দিতে ব্যাপক বিপাকে পড়তে হচ্ছে রাজধানীর ঢাকা কলেজের স্নাতক ৪র্থ, ৩য় এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের।

সেশন জট নিরসনে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও প্রধান সমন্বয়কারীর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট ডিন, সরকারি ৭ কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার সিন্ধান্ত হয়। ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্বের অসমাপ্ত পরীক্ষা ও ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণের সিন্ধান্ত হয়। জানানো হয় ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শুরু হবে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা৷ তবে নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার আগে করতে হবে ফরম পূরন৷ আবাসিক সুবিধা ভোগ করা প্রতি শিক্ষার্থীর খরচ প্রায় দশ হাজার টাকা৷ এখানেই বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা৷

বছরজুড়ে বাসের চাকা না ঘুরলেও দিতে মওকুফ হয়নি পরিবহণ ফি, করোনাকালেও অসহায় শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে কলেজ থেকে কোন মনবিক সহায়তা না জুটলেও দিতে হবে দরিদ্র তহবিল ফি, চিকিৎসা কেন্দ্র কিংবা চিকিৎসক না থাকা সত্ত্বেও দিতে হবে চিকিৎসা ফি, ছাত্র সংসদ না থাকলেও দিতে হবে ছাত্রসংসদ ফি, শিক্ষার্থীরা বাসায় বসে পরীক্ষা দিলেও এবার দিতে হবে অভ্যন্তরীণ ও ইনকোর্স পরীক্ষা ফি সহ বিভিন্ন ফি ও যুক্ত করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই অনেকের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। তারপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অবস্থায় পরীক্ষা চালু হওয়ায় এই মুহূর্তে ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত ফি আদায় অযৌক্তিক। যেহেতু গত দশ মাস কলেজের আবাসিক হলগুলো বন্ধ রয়েছে তাই এই মুহূর্তে হল ভাড়া আদায়ের কোন যুক্তিই দেখছেন না তাঁরা৷ এছাড়াও পরিবহন, চিকিৎসা, লাইব্রেরী অন্যান্য সুবিধা শিক্ষার্থীরা যেহেতু ভোগ করেনি তাই এসব ফি আদায় সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা কলেজের আন্তর্জাতিক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. শরীফ হাসান বলেন, গত এক বছরে কলেজের কোন শিক্ষার্থী বাস, লাইব্রেরী, ম্যাগাজিন, বিজ্ঞান ক্লাব, খেলাধুলা, চিকিৎসা সহ এসব সামগ্রী ব্যবহার করেনি৷ পুরো ক্যাম্পাসটাই যেখানে বন্ধ সেখানে ফরম পূরণের জন্য এসবের ফি নেয়া সম্পন্ন অযৌক্তিক৷ আমরা চাই কলেজ প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এসব ফি মওকুফ করবে৷

উত্তর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মঈনুল হাসান বলেন, হল না খুলেই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে৷ এখন ঢাকায় এসে বাসা ভাড়া দিব! নাকি পরীক্ষার ফরম পূরনে দশ হাজার টাকা দিব! পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব না ৷ খুবই মানসিক দুশ্চিন্তায় আছি৷

তবে এবিষয়ে কয়েকটি হলের তত্ত্বাবধায়কদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও বিষয়টি অধ্যক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট কমিটি দেখবে বলে মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

কলেজ প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য ফি নেয়া হচ্ছে৷ যা করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির পূর্ববর্তী সময়ের৷ তাই এসব ফি কমানোর কোন সুযোগ নেই৷

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন বলেন, এগুলো কমানোর কোন সুযোগ নেই। হল চার্জ ছাত্ররা না দিলে হল চলবে কিভাবে? হল তো নিজের আয়ে নিজে চলে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে থাকছে তো এক বছর নয় মাস। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের হল চার্জ তো নিচ্ছি না। অনেকেই অনেক কথা বলবে কিন্তু কলেজ তো পরিচালনা করতে হবে। নয়তো কলেজ চলবে কিভাবে!

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরও বলেন, কলেজের দরিদ্র তহবিলের সক্ষমতা খুবই সামান্য। লিমিটেড কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া সবাইকে সহায়তা দেয়া সম্ভব নয়। করোনার সময় অনেকেই সহায়তার জন্য এসেছিল। আমরা তাদের স্ব-স্ব বিভাগ হয়ে আবেদন করতে বলেছিলাম। কারণ বিভাগ জানে কার অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন।


সর্বশেষ সংবাদ