‘আল-বিদা’র প্রতিক্রিয়া বেড়েই চলেছে

  © টিডিসি ফটো

‘আল-বিদা’। ফেসবুকে ছোট্ট এই দুই শব্দ লিখে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছেন ঢাকা বিদ্যালয়ের ছাত্র ইমাম হোসাইন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন তিনি। ইমামের চলে যাওয়ার পর ইতোমধ্যেই চারদিন গত হয়েছে। কিন্তু তার সেই ছোট্ট স্ট্যাটাসের প্রতিক্রিয়া এখনও বেড়েই চলেছে। যেখানে ইমামের রুহের মাগফেরাত কামনা যেমন অনেকে দোয়া করেছেন, তেমনি আত্মহত্যার সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।

সর্বশেষ ২১ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে, ইমামের স্ট্যাটাসটিতে মোট ২৫ হাজার লাইক পড়েছে। মন্তব্য এসেছে ১০ হাজারেরও বেশি। এছাড়াও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফেসবুক ব্যাবহারকারী পোস্টটি শেয়ার করেছেন । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আত্মহত্যা মূল সমাধান নয়। আত্মহত্যা করলে সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায় না। অথচ আজ-কাল সচেতনরাই এই কাজ বেশি করছে।

ইমামের স্ট্যাটাসে মন্তব্যকারী এমনই একজন ফারহানা হোসেন লিরা। তিনি লিখেছেন, ‌‘রিলেশনশীপে নিজের বেস্ট এফোর্ট দিয়েও ছ্যাঁকা খেয়ে কতো মানুষ নিজেকে দ্বিতীয়বার সু্যােগ দিয়েছে , তারপরও কেনো কিছু মানুষ এতো স্বার্থপরের মতো নিজের ফ্যামিলির কথা না ভেবে শুধু মাত্র নিজের কষ্ট দূর করতে এই পথ বেছে নেয়? আত্মহত্যার কারণে এখন ওই মেয়ের কি হবে? কিছুই না। দুইদিনের জন্য সবার কাছে সে বদনাম হয়েছে । এরপর সবাই তাকে ভুলে যাবে। তাহলে কি স্বার্থে নিজের মায়ের বুক খালি করলেন? কত ত্যাগ স্বীকার করে একটা মা বাবা সন্তান লালন পালন করে তা আজ নিজে মা হয়ে বুঝি। যখন তাদের জন্য কিছু করার উপযুক্ত আমরা হই তখন কোথাকার কোন সম্পর্কের জন্য এতো বছরের সম্পর্কই আমরা ভুলে যাই।’

তিনি আরো লিখেন, ‘কথাগুলো যে মারা গিয়েছে তার জন্য বলছি না, কারণ তাকে কিছু বলে তার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো না আমরা কেউই। যারা এই কমেন্ট বক্সে বলছেন তারাও ইমাম হোসেনের কাছে খুব শীঘ্রই যাচ্ছেন তাদের জন্য বলছি। তারা একটু ভালো করে পড়ে দেখেন কমেন্টগুলো কতো মানুষ তাকে নিয়ে কতো বাজে কথাও বলছে। এইগুলো আপনারা দেখতে পারবেন কিন্তু মরে যাবার পরের লাইফে তার কি হচ্ছে তা নিয়ে কিন্তু ইমাম ভাই কোনো স্ট্যাটাস দিতে পারবেন না। যদি দিতে পারতো তাহলে ভালো হতো। তাহলে হয়তো যারা এমন ভাবছেন তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত বদলানোর কথা ভাবতেন।’

পড়ুন: করোনাকালেও থামছে না আত্মহত্যার মিছিল, নেপথ্যে বেকারত্ব-নিঃসঙ্গতা-প্রেম

নাহিদ হাসান কিবরিয়া বলছেন, একজনে আত্মহত্যা করলে দশজনে উৎসাহী হয় আর এভাবেই আত্মহত্যার পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। আচ্ছা ভাই তোমাদের মা-বাবা তোমাদের জন্য কিছুই করেননি? তাদের চেয়ে বড় হয়ে যায় তোমাদের হারাম রিলেশনশিপে মেয়ে? ১০মাস ১০ দিন তোমাদের মা-বাবা কার জন্য এতো কষ্ট করেছিল? কপালে না থাকলে তুই কিভাবে পাবি?

আত্মহত্যা করে কি লাভটা হইছে (?) না এ জগত না ঐ জগত, কোনোটাই তো পাইলিনা! মেয়েটা তো বড্ড সুখে আছে তোরে ছাড়া তাইলে তুই কেন সুখি হইতে পারলিনা!

যাক ভাই তোদের জন্য আফসোস হয় না, আফসোস হয় তোর দেখাদেখি আরো কতজন না জানি এই ঘৃণিত কাজটা করে ফেলে। আত্মহত্যা সমাধান না না না।’

এদিকে আত্মহত্যার জন্য শুরু থেকে ইমামের প্রেমিকাকে (ইডেন কলেজে পড়ুয়া এক ছাত্রী) দায়ী করে আসছিলেন তার সহপাঠীরা। এ বিষয়ে ইমাম হোসাইনের যমজ ভাই মো. ইমাম হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারকে যারা চেনে, তারা কেউই ভাবতে পারেনি যে আমার ভাই আত্মহত্যা করবে। কিন্তু আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে। আমি চাই, ওই মেয়ের ফাঁসি হোক।’

এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে ইমাম হাসান বলেন, ‘মামলা অবশ্যই করা হবে। আগে বাবা-মা একটু স্বাভাবিক হোক, তারা কান্নাকাটি করছে।’ তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি। ঈদের আগেও কত স্মৃতি। একসাথে খেয়েছি, ঘুমিয়েছি। তাকে মিস করছি, সে আমার কলিজার আপন ভাই।’

ঢাকায় পলিটেকনিকে অধ্যয়নরত ইমাম হাসান বলেন, ‘বাবা-মা দুজনেরই অনেক আশা ছিল ভাই-বোনদের নিয়ে। বাবার স্বপ্ন ছিল সবাই ভালো কিছু হবে। যেদিন বাইরে যায়, আমি সেদিন চুম্বন দিয়েছিলাম ভাইকে। কিন্তু সেটাই যে শেষ চুম্বন হবে ভাবতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘ভাইকে অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু মেয়েটার প্রতি এত মায়া জন্মেছে যে, ছাড়তে পারেনি। আমরা শুনেছিলাম, ছয় মাস আগেই সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। মেয়েকে অনেক বুঝিয়েছে, কিন্তু সে জবাব দেয়নি। তাদের সম্পর্কের কথা পরিবারের সবাই জানে। মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকেও কেউ যোগাযোগ করেনি।’


সর্বশেষ সংবাদ