আন্দোলনের হুঁশিয়ারি বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ০৯:৪৫ AM , আপডেট: ২৯ জুন ২০২০, ১০:১৩ AM
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের স্নাতক-স্নাতকোত্তর কোর্সে কর্মরত শিক্ষকদের প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়েছে। এই ধরনের আচরণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরে না এলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আন্দোলনে শিক্ষা ক্ষেত্রে অসন্তোষ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তার দায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন এবং সদস্য সচিব মো. মেহরাব আলী পাঠানো বিবৃতিতে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
শিক্ষকদের সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজের স্নাতক-স্নাতকোত্তর কোর্সে কর্মরত শিক্ষকরা কিছু যৌক্তিক কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করে এমপিওর দাবি নিয়ে ১৬ জুন থেকে সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সংবাদ সম্মেলন পালন করে আসছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৩ সাল থেকে আমরা জনবল কাঠামোর বাইরে থাকায় সরকারি সুযোগ সুবিধার বাইরে রয়েছি। বিগত ২০০৮ সাল থেকে এমপিওভুক্তির দাবি নিয়ে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন ও আবেদন করে আসছি। এই বিষয়ে বর্তমান শিক্ষকবান্ধব সরকারের আন্তরিকতা থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে কোন দৃশ্যমান সহযোগিতা পাইনি।
শিক্ষকরা জানান, স্নাতক শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপ-সচিব লায়লা আরজুমান্দ বানু স্বাক্ষরিত পত্রে ভিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মতামত জানতে চাওয়া হলেও চিঠির জবাব দেওয়া হয়নি। ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি আমাদের ১০ হাজার শিক্ষকের এমপিওর জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠায়। সেটি বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য ভিসিকে অনেক অনুরোধ করেও সেটা আমলে নেননি।
২০১৭ সালের ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠিতে ভিসির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মতামত জানতে চাওয়া হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেই চিঠির জবাব দেয়নি। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন আরও অনেক চিঠির কপি শিক্ষকদের হাতে আছে, যা কৌশলে উপেক্ষা করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোর সংশোধন কমিটির প্রথম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে স্নাতক শিক্ষকদের জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কমিটির ৫ম সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আপত্তি জানায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধির কাছে স্নাতক-স্নাতকোত্তর কলেজের সংখ্যা জানতে চাওয়া হলে তিনি ৮১৫টি উল্লেখ করেছিলেন। অথচ সরকারি ও নতুন জাতীয়করণ কলেজ বাদে বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৩৫০টি কলেজে স্নাতক কোর্স চালু রয়েছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি দেয় অথচ মোট কলেজের সংখ্যা,শিক্ষকের সংখ্যার নির্ভরযোগ্য তথ্য না জানিয়ে প্রতিবারের মতো এবারের জনবল থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষকরা জানান, কলেজভেদে ৩ থেকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হলেও করোনার কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি আদায় করা অসম্ভব। নামমাত্র বেতনটুকুও বন্ধ হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষায় বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষক বেতনহীন জীবনযাপন করছেন। এসব শিক্ষক পেশাগত কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে না ত্রাণ নিতে পেরেছেন, না কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য চাইতে পেরেছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে ঘরেই তারা অনাহার-অর্ধাহারে জীবনযাপন করে যাচ্ছেন।
গত ২৫ জুন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে একটি আদেশ দিয়ে জানানো হয়েছে যে, যেসব শিক্ষক সংবাদ সম্মেলন করেছে তাদের আচরণ আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গভর্নিং বডির সাথে শিক্ষকদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টাকে শিক্ষক সমাজ কোনভাবেই বরদাশত করবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনাকাঙ্খিত চিঠির প্রতি আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
এই চিঠির মাধ্যমেই পরিষ্কার হয়েছে যে, স্নাতক-স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের জনবল কাঠামোর বাইরে রাখার জন্য সব ধরনের অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আর সেজন্যই জনবল কাঠামোতে নিয়ে আসার জন্য সহযোগিতা না করে বরং হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। যা অন্যায় ও ন্যাক্কারজনক।
এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তির মাধ্যমে যত্রতত্র স্নাতক কোর্স খোলার অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব শিক্ষকের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক হয়রানিমূলক আচরণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরে না গেলে আমরা কঠোর আন্দোলন যেতে বাধ্য হবো। দেশের নাজুক অবস্থায় শিক্ষা ক্ষেত্রে অসন্তোষ পরিবেশ সৃষ্টি হলে তার দায় দায়িত্ব জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কেই নিতে হবে।
শিক্ষকরা তাদের জীবন জীবিকার মান নিশ্চিতকরণের লক্ষে এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।