স্যালুট ইউ বাংলাদেশ পুলিশ— রাবি শিক্ষকের স্ট্যাটাস ভাইরাল

  © ফাইল ফটো

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জীবনের মায়া ত্যাগ করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত ও লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্তও হয়েছেন।

ঠিক এমন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর এর ‘‘স্যালুট ইউ বাংলাদেশ পুলিশ’’ শিরোনামে দেয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়। ২১ এপ্রিল রাতে দেয়া স্ট্যাটাসটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এ শেয়ার করা হয়। নিচে স্ট্যাটসটি হুবহু তুলে ধরা হলো -

‘‘এ কথা আর বলবার অপেক্ষা রাখেনা যে আমরা এই প্রজন্ম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন পরিস্থিতি আমাদের এই প্রজন্ম দেখেনি কখনোই আগে। করোনার এই মহামারী তে পুরো বিশ্ব আজ নাকাল। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ভয়ে প্রতিটি দিন যাচ্ছে সবার। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি তে বিভিন্ন পেশাজীবী সমাজ বিশেষত ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স, পুলিশ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ছাত্র সংগঠন বিশেষত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফ্রন্টলাইন থেকেই নিরলস কাজ করে যাচ্ছে মানুষের জন্য, মানবতার তাগিদে। অন্য সকলেও যে যা পারছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে বিপদগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতায়।

এ যেন সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। সবাইকেই জানাই ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা..কবি যথার্থই বলেছেন ‘‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই’’।

আজ আমি বলবো কিছু অকুতোভয় বীরদের কথা যাদের বীরত্ব দেখছি এখনও। জ্বী হ্যাঁ,আমি বলছি বাংলাদেশ পুলিশের কথা। সেই ১৯৭১ সালেও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ বাহিনীই কিন্তু প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আমার এই ছোট্ট শিক্ষকতার জীবনে ২০১২ সাল থেকে ৩১তম বিসিএস পুলিশ(ক্যাডার) হতে বর্তমানে চলমান ৩৭তম পুলিশ ক্যাডার এএসপিদের ক্লাস নেই আমি হোম অফ পুলিশ খ্যাত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদাতে। যার সুবাদে আমি অনেক পুলিশ অফিসারের সাথে বেশ কানেক্টেড। সেখানে ক্লাস নেয়ার সময় থেকেই লক্ষ্য করি চৌকস এই অফিসারেরা এক অন্যরকম মানবিক পুলিশ অফিসার হওয়ার দৃপ্ত শপথ নিতেই এসেছে প্রশিক্ষণে। তাদের চোখেমুখে দেখি আমি পুলিশ হবে জনতার এই মন্ত্রে তারা স্বপ্ন লালন করে।

বিগত ৮ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি একটুও বাড়িয়ে বলিনি। সোশ্যাল মিডিয়া আর অন্য মিডিয়ার মাধ্যমে তাই তো আজও আমি সহ আমরা সবাই দেখছি এই পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য কতটা উজাড় করে এই মহামারী করোনা যুদ্ধে নিজেদেরকে নিয়োজিত রেখেছেন। নিজের জীবন এর মায়া,পরিবারের মায়া সবকিছু কে তোয়াক্কা না করে রাস্তায় নেমেছে কে? পুলিশ। মধ্যবিত্তের মাঝে গোপনে খাবার দিচ্ছে পুলিশ। বেতনের ২০ কোটি টাকা দিচ্ছে পুলিশ। নিজে কাঁধে বহন করে ত্রাণ দিচ্ছে পুলিশ। আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ডাক্তারদের কর্মস্থলে আনা নেয়া করছে পুলিশ। প্রতিদিন পুলিশের গাড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাড়ে আট হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার দিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। কবর খুঁড়ছে পুলিশ,দাফন করছে পুলিশ,জানাজা পড়াচ্ছে পুলিশ। গান গেয়ে বাসায় থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে পুলিশ। সারাদিন রাস্তায় পরে থাকা লাশটি উদ্ধার করছে পুলিশ। স্ত্রী সন্তান থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাস্তায় পরে থাকা অসুস্থ বৃদ্ধ ব্যক্তিটির আশ্রয় দিচ্ছে পুলিশ। বাঁশকাটা থেকে লাশ বহন করা সব কাজ নিজেরাই করে ঝড় বাদলকে উপেক্ষা করে লাশের সৎকার করছে কে? পুলিশ...কৃষকদের পাশে, দূর্দশাগ্রস্থ হকার দের পাশে, যৌনপল্লিতে থাকা অসহায় মানুষের পাশে, কর্মহীন রিক্সাচালক থেকে ভাসমান বেদে সবার পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ।

এমন মানবিক ও অকুতোভয় পুলিশ ই তো চেয়েছি আমরা যে পুলিশ হবে মানবতার মন্ত্রে বলিয়ান,যে পুলিশ হবে জনগণের প্রকৃত বন্ধু...আজ জাতি সত্যিই গর্বিত পুলিশের ভূমিকায়... আসুন,আমরা সাদা কে সাদা আর কালো কে কালো বলি। যার যা প্রাপ্য তাকে সে সম্মানটুকু দিতে কার্পণ্য না করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অতি যথার্থই বলেছেন সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হয় পুলিশ কেই।ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার মতে,গোটা বিশ্বে এই করোনা যুদ্ধে সম্মুখ সারীর বীর যোদ্ধা হলো আমাদের এই পুলিশ বাহিনী... আমি আমার বন্ধু তালিকায় থাকা সকল চৌকস পুলিশ অফিসার সহ বাংলাদেশ পুলিশের সকল সদস্যকে অন্তরের অন্তস্তল থেকে জানাই ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা..আপনারা আমাদের করেছেন গর্বিত...আপনাদের জন্য শুভকামনা, দোয়া আর ভালবাসা নিরন্তর... এভাবেই এগিয়ে যান দৃঢ় প্রত্যয়ে...মহামারী করোনার এই যুদ্ধ জয় করে ফিরুন সগৌরবে বীরের বেশে..আপনারাই এই যুদ্ধের প্রকৃত বীর... স্যালুট ইউ বাংলাদেশ পুলিশ...


সর্বশেষ সংবাদ