ভুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের, হুমকিতে ৫০০ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ
- ফাতেমা তুজ জিনিয়া, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:১৬ AM , আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৪৫ AM
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইতিহাস বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশের প্রতিবাদে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এ সিদ্ধান্তে হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।
বিভাগটির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনু্যায়ী সকল শর্ত মেনে নিজেদের যোগ্যতায় আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্ত সাবেক উপাচার্যের ভুলে বর্তমানে আমাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে। অনুমোদনবিহীন বিভাগ চালু করা প্রশাসনের অপরাধ হলেও বিভাগ বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে এই অপরাধের শাস্তি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুমোদন ছাড়াই বিভাগ প্রতিষ্ঠা করায় ইতিহাস বিভাগে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোর নির্দেশ দেয় ইউজিসি। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং বিভাগটির অনুমোদনের দাবিতে বর্তমানে আন্দোলনরত রয়েছেন বিভাগটির প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বশেমুরবিপ্রবির স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে ইতিহাস বিভাগে ৯৫টি আসন অন্তর্ভুক্ত করেন এবং কোনো শিক্ষক নিয়োগ ছাড়াই ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন।
সাবেক এই উপাচার্য এক বছরে বিভাগটির অনুমোদন, নিজস্ব শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে আসন সংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ করেন এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও এই ধারা অব্যাহত রাখেন। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতেও অনুমোদনহীন বিভাগটিতে ২০০ আসন রাখা হয়।
এছাড়া ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগটিকে মানবিক অনুষদের অধীনে দেখানো হলেও এর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় বঙ্গবন্ধু ইন্সটিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার এন্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধীনে।
ইনস্টিটিউটটির সহকারী অধ্যাপক সানজিদা পারভীন জানান, ইনস্টিটিউটটি উচ্চতর ডিগ্রী প্রদানের জন্য হলেও এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি না থাকলেও সাবেক উপাচার্য মৌখিকভাবে এই ইনস্টিটিউটকে ইতিহাস বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন।
এদিকে, ইতিহাস বিভাগ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভাগটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ ফায়েকুজ্জামান মিয়া তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন, ‘কোন স্বৈরাচারী-পাপী লোকের লোভ আর ভুলের মাসুল কোনভাবেই আমার নিরীহ-মেধাবী মাসুম ইতিহাস বিভাগের ছেলে-মেয়েরা দেবেনা। বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে আমাদের গৌরবময় ইতিহাস চর্চা ও বৈশ্বিক ইতিহাস জানা অপরিহার্য। ইউজিসির এই হঠকারী সিদ্ধান্তকে আমরা বশেমুরবিপ্রবি পরিবার কোনভাবেই মানিনা, মানব না। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কোনভাবেই অনিশ্চয়তায়/অন্ধকারে চলে যেতে আমরা দেব না।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে ইতিহাস বিভাগে প্রায় ৪২৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ইউজিসির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ইতিহাস বিভাগের অনুমোদনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।