নির্মাণজটে কুবির প্রকৌশল অনুষদ, শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

  © টিডিসি ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন-৪ এর নির্মাণে নির্ধারিত সময়সীমার দ্বিগুণ সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ করতে পারেনি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ এবং খোকন কন্সট্রাকশন। ভবন নির্মাণে ধীরগতির কারণে শ্রেণিকক্ষ সংকট, ল্যাবের অভাব, সেশনজটসহ নানা ভোগান্তি পোহাচ্ছে প্রকৌশল অনুষদের অন্তত সাতশ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, পাঁচতলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন-৪ (প্রকৌশল অনুষদ) এর কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের মার্চে। ১৫ মাসের চুক্তিতে কাজ শুরু হলেও প্রায় ৩১ মাসেও কাজ শেষ করতে পারেনি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকির এন্টারপ্রাইজ এবং খোকন কন্সট্রাকশন।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাঁচতলা বিশিষ্ট এ ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার টাইলস এবং বৈদ্যুতিক কাজ চলছে। আর চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় গাঁথুনির কাজ চলছে। প্রকৌশল অনুষদভুক্ত দুটি বিভাগকে চলতি মাসের ১২ তারিখ দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও সে কথা রাখতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় চেয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

তবে এ দুটি তলা বুঝিয়ে দেবার বিষয়ে নির্ধারিত কোন সময় বলতে পারেননি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কয়েকদিনের ভিতর হস্তান্তর হয়ে যাবে। টাইলসের কাজ চলতেছে তো, আর ইলেক্ট্রিক কাজও চলতেছে।’ এসময় সম্পূর্ণ ভবনটি নির্মাণে আরও কত সময় লাগতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় গাঁথুনির কাজ চলতেছে। আনুমানিক ৩ মাস সময় লাগতে পারে।’ তবে ধারণা করা হচ্ছে যে গতিতে ভবনটির কাজ চলছে তাতে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হতে আরও প্রায় এক বছর সময় লাগবে।

প্রকৌশল অনুষদভুক্ত ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগে সাতটি ব্যাচ চলমান থাকলেও তাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে একটিমাত্র শ্রেণীকক্ষ। আর ল্যাবের জন্য ৫০টি কম্পিউটার থাকলেও কক্ষের অভাবে সেগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। বিভাগটিতে প্রায় ছয় মাস থেকে দুই বছরের সেশনজট রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা একদিকে ব্যাবহারিক দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অপরদিকে সেশনজটের অভিশাপও পিছু ছাড়ছেনা।

বিভাগটি ঘুরে দেখা যায়, প্রকৌশল অনুষদভুক্ত বিভাগটিতে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট সাতটি ব্যাচ চলমান রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাচে প্রতি সেমিস্টারে অন্তত ১১ থেকে ১৩টি কোর্স অধ্যয়ন করতে হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু বিভাগটির জন্য শ্রেণীকক্ষ বরাদ্দ রয়েছে মাত্র একটি। পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাড়ছে সেশনজট ভোগান্তি। জানা যায়, বিভাগটির ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করার কথা থাকলেও তারা কিছুদিন আগে স্নাতকোত্তর ২য় বর্ষের পরীক্ষা শেষ করেছেন। অন্য ব্যাচগুলোতেও সেশনজটের ভয়াবহতা প্রকট।

ভবনটি বুঝিয়ে না দেয়ায় বিভাগগুলোতে শ্রেণীকক্ষ সংকট আরও প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আইসিটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো: তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের আন্তরিকতা রয়েছে। কিন্তু শ্রেণীকক্ষ না থাকায় সেশনজট থাকলেও কমিয়ে আনতে পারছিনা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার আমরা সময় বেঁধে দিয়েছি। এখন ঠিকাদার পরিবর্তন করাও অসম্ভব। এতে অনেক জটিলতা রয়েছে। তবে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।’

ল্যাবরুম এবং নির্মানাধীন ভবনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘এ মাসের ১২ তারিখ একাডেমিক ভবন-৪ এর ২য় এবং ৩য় তলা আমাদের কাছে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু এখন আবার ঠিকাদার ৩০ তারিখ সময় দিয়েছে।’


সর্বশেষ সংবাদ