বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের গোবর বাণিজ্য!

স্তুপ করে রাখা গোবর
স্তুপ করে রাখা গোবর  © টিডিসি ফটো

নিয়োগ দুর্নীতি, ভর্তি বানিজ্য, প্রকল্প দুর্নীতি আর নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য উদ্ভিদের পরিচর্যার নামে প্রায় কোটি টাকার গোবর বাণিজ্য করেছেন বলে দাবি করেছেন তারা।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বরের বিপরীত পাশে গোবর স্তুপ করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই এখানে গোবর স্তুপ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদের পরিচর্যায় নিয়োজিত একাধিক কর্মী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরের সেকশন অফিসার নিজামুল হক চৌধুরীর মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকার গোবর ক্রয় করা হয়েছে। কর্মীরা টাকার অঙ্ক বলতে না পারলেও এটুকু নিশ্চিত করেছেন যে, টাকার পরিমাণ প্রায় কোটির কাছাকাছি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন মূলত উদ্ভিদ গবেষক। এর আগে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ এর বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মূলত সেই সূত্রেই গাছের সঙ্গে তার সখ্যতা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বশেমুরবিপ্রবিতে যেখানে বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়নটা বেশি দরকার ছিল, সেখানে তিনি গাছ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন বেশি। আর এ কারণেই খাতটিতে বছরের পর বছর লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। আর ব্যয় দেখিয়েই লোপাট করেছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে ক্যাম্পাসে প্রায় ২২ হাজার প্রকার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে বনজ গাছ আছে ২৮০০, ফলজ গাছ প্রায় ৭০০০, ভেষজ ১০০০, শোভাবর্ধনকারী গাছ ১০০০০ এবং দেশি বিলুপ্ত গাছ প্রায় ১০০০। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য গাছের সংরক্ষণ ভান্ডার হিসেবে খ্যাত এই ক্যাম্পাস। আর এগুলোকে পুঁজি করেই উপাচার্য বিপুল পরিমানে অর্থ আত্নসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ২০১৭ সালের ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে গবেষণায় ব্যায় করা হয় মাত্র ১০ লক্ষ টাকা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান করা উচিত সেখানে গবেষণায় অর্থ ব্যয় না করে গোবরে অর্থ ব্যয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষার্থীরা।

গোবর বানিজ্যের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী জানান, প্রতি সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গোবর নিয়ে কয়েকটি গাড়ি প্রবেশ করে। কৌতুহলবশত এই সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানতে জানা যায়, গোবর ক্রয়ে বরাদ্দ নাকি প্রায় কোটি টাকা, তবে এর বেশি কিছু ওই কর্মচারী জানাতে চাননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের টাকা লোপাট করতে পারেন, তার দ্বারা গোবর বাণিজ্য অস্বাভাবিক নয়। এ বিষয়ে তদন্ত হলে সত্যটা জানা যাবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বশেমুরবিপ্রবির সেকশন অফিসার নিজামুল হক চৌধুরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে বালু বেশি থাকায় মাঝে-মধ্যে গোবর কেনা হয়েছে। তবে তা কোটি টাকা না। গত পাঁচ বছরে কত টাকার গোবর কেনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচ বছরের হিসাব কীভাবে দিব? আমি বর্তমানে দায়িত্বে নেই। যিনি দায়িত্বে আছেন আপনি তার সাথে যোগাযোগ করুন। উপাচার্য ঘটনার সাথে জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি কিছু জানি না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয় হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ