তবুও আন্দোলনে কর্মচারীরা, ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
- সৌম্য সরকার, বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০১৯, ০৮:১০ PM , আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯, ০৮:১৯ PM
কর্মচারীদের পদোন্নতি নীতিমালা প্রণয়ন, ৪৪ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পর্যায়ক্রমে মাস্টাররোল কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেয়ার পরও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে দীর্ঘদিনেও কর্মচারীরা আন্দোলন থেকে সরে না আসায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের দাবিসমূহ মেনে নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৭ জুন থেকে দুই দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয় কর্মচারী সমন্বয় পারিষদ। এরপরে তাদের দাবী আদায়ের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কর্মচারীদের নীতিমালা সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনুমোদন করা, বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও কর্মচারীদের ৪৪ মাসের বেতন পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং ধাপে ধাপে মাস্টাররোল থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে স্থায়ী নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এতে করে আন্দোলন চলমান রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছেন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন চলমান থাকায় কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং তারা মনে করেন এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।
টানা ১ মাসের বেশি সময় ধরে কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবন তালা দিয়ে রাখায় বিভিন্ন ডিপাটমেন্টের ফাইনাল পরীক্ষা আটকে আছে। এতে সেশনজট বৃদ্ধিরও আশংকা রয়েছে। এছাড়াও পাস করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করার জন্য মার্কসীট ও সার্টিফিকেট উত্তোলন করতে পারছেন না বলেও জানিয়েছেন অনেকে। এ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে তানজিল আহমেদ নামক এক শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এটা একটা রাজনীতি,আর এখানে সবসময় শিক্ষার্থীরা বলির পাঠা হচ্ছে। দাবি মেনে নেওয়ার পর আমাদের জিম্মি করে আন্দোলন করা অন্যায়। উম্মে হাবিবা নামক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ১মাস পরীক্ষা না হওয়া মানে শিক্ষা জীবন দীর্ঘায়িত হওয়া। এতে আমাদের অভিভাকদের উপর চাপ বাড়ছে। কর্মচারীরা যতদিন ইচ্ছে আন্দোলন করুক কিন্তু আমাদের জিম্মি করে কেনো?
শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ও প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়ার দাবীতে গত বুধবার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে মানবন্ধনে দাঁড়ান শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মত দল-মত নির্বিশেষে সব দলের শিক্ষকরা মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধনে শিক্ষকরা দাবি করেন,আন্দোলন কোন সমস্যার সমাধান নয়। এ সময় দ্রুত আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে আসতে কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানান একাধিক শিক্ষক। অন্যথায় শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শিক্ষকরা কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুশিয়ারিও দেন।
নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. আর এম হাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পর হলেও কর্মচারীবান্ধব একটা নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করেছি। শতভাগ না হলেও এতে অন্তত ৯০ ভাগ সফল। এখানে কোন অস্পষ্টটা নেই। এরপরও যদি কোনো বিষয়ে কারও আপত্তি থাকে তা চিহ্নিত করে আলোচনার আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা যেতে পারে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে জিম্মি করে এভাবে আন্দোলন করা যৌক্তিক না।
কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের উপদেষ্টা মাহফুজুর রাহমান বলেন, নীতিমালার বেশকিছু জায়গায় অস্পষ্টতা আছে। বারবার দাবি করার পরও আমাদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়নি। বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন চায় আমরা সাবেক উপাচার্য জলিল স্যারের আমলে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সেটা দরখাস্তে উল্লেখ করি। এতে আমাদের ক্ষতির আশংকা আছে। তাই আমরা চাই উপাচার্য স্যার আমাদের সাথে আবার আলোচনায় বসুন।