চাইলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী, হইলাম জঙ্গী

শিক্ষার্থীদের ‘জঙ্গী’ বলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রকৌশল ও প্রযক্তি অনুষদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘জঙ্গি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ নামে আখ্যা দেওয়ায় এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে তারা। বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করে প্রকৌশল ও প্রযক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা ‘জঙ্গি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়া বক্তব্য অনতিবিলম্বে অনুষদকে প্রত্যাহার করতে বলেন। নতুবা পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা। এসময় মানববন্ধনে ‘চাইলাম ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী, হইলাম জঙ্গী’, ‘আমি জঙ্গী?’, ‘চাইলাম ডিগ্রী, হইলাম সন্ত্রাস’, ‘ডিগ্রী নিয়ে প্রহসন কেন?’ এমন বিভিন্ন প্রতিবাদমূলক ফেস্টুন প্রদর্শন করে তারা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সারাবিশ্ব যোখনে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেখানে আমাদেরকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গি বলে বিতর্কিত করা হচ্ছে। ভিসি স্যার নিজেও ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়কে জঙ্গিমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এ অবস্থায় অনুষদের এ মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়কে বিতর্কিত করে তুলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

মানবন্ধন শেষে বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারীর সাঙ্গে দেখা করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিষয়টি উপাচার্যের নিকট তুলে ধরেন এবং এর প্রতিবাদ জানান। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন স্থগিত করেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘জঙ্গি’ এবং ‘সন্ত্রাস’ বলে আখ্যা দেয়ার বিষয়ে প্রকৌশন ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মমতাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনুষদের সদস্যরা গত ২৯ এপ্রিল রাতে শিক্ষার্থীদের ওই আচারণকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী আচরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কেননা ওইদিন আন্দোলনে আমাকেসহ ছাত্র উপদেষ্টা ও অনুষদের দুই কর্মকর্তাকে দীর্ঘরাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।’

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীর দাবিতে আন্দোলন করে আসছে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল ডিগ্রির দাবিতে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে তালা লাগিয়ে ধর্মঘট পালন তারা। এসময় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মমতাজুল ইসলাম ও ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বম্মন অনুষদের ভেতর অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

পরে তাদের মুক্ত করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ। এরপর ভোর ৪টার দিকে সেখান থেকে দিকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আটককৃতদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এ ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।

পরবর্তীতে গত ২৯ এপ্রিল অনুষদীয় জরুরী সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরিবর্তে তাদের বিচার চাওয়া হয়। এসময় সভার রেজুলেশন বহিতে শিক্ষার্থীদের আচারণকে ‘জঙ্গী’ ও ‘সন্ত্রাসী’ বলে অবহিত করা হয়। পরে প্রায় দুই মাস পর এ সংবলিত একটি লিখিত কপি হাতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীরা।


সর্বশেষ সংবাদ