ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি অবস্থা জারি, আটক ২২

  © টিডিসি ফটো

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে আন্দোলন অব্যহত রেখেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে তিন দফা দাবিতে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন তারা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন ঠেকাতে ক্যাম্পাসে জরুরী অবস্থা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের বহনকারী সব গাড়ি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে না পারায় দশটি বিভাগের পূর্বনিধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে গতকাল থেকে আমরণ অনশনে যাওয়া পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বুধবার (২৪ এপ্রিল) ভোরে অনশনরত অবস্থায় ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে বলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২২ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনে জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির দাবিতে গতকাল থেকেই ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভূক্ত পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলছিল। অনশনে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার পরও প্রশাসন এবং অনুষদের ডিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা না করায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে দুপুর ২টার দিকে অনুষদের ডিন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ফলে অফিসের ভেতরে আটকা পড়েন ডিন অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল মমিন ও পিওন বাদল। এরপর রাত ৯টায় অবরুদ্ধ দুই কর্মচারীদেরকে উদ্ধার করতে আসেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মমতাজুল ইসলাম ও ছাত্র-উপদেষ্টা ড. পরেশ চন্দ্র বর্ম্মণ। তারা ভবনের ভিতরে ঢুকলে তাদেরকেও অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা।

পরে ডিন ও ছাত্র উপদেষ্ঠাকে উদ্ধার করতে রাত ১টার দিকে সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. আনিছুর রহমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসান-উল হক আম্বিয়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর রাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় আন্দোলককারীদের সাথে সমঝোতা করতে ব্যর্থ হন তারা।

এছাড়া রাত সাড়ে ১১ টা থেকেই ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পরে সাড়ে রাত ৪টার দিকে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত অতিরিক্ত ডিএসবি মোস্তাক, ডিএসবি মোস্তাফিজুর রহমান, মিরপুর জোনের এএসপি ফারজানা ইসলাম এবং ইবি থানার ওসি রতন শেখের নেতৃত্বে গেটের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন।

ভেতরে ঢুকে ডিন, ছাত্র উপদেষ্ঠা ও দুই কর্মচারীকে উদ্ধার করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা করিডোরে অবস্থান নিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে এবং শ্লোগান দিতে থাকে। পরে পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথবাহিনীর অভিযানে আরিফুল ইসলাম, তারিক, রাজ, মাহাদী, রিয়াদ, অভি, দেলাওয়ার, হাফিজ, সাব্বিরসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। অন্যদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছে পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে ক্যাম্পাসে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সকল প্রকার সভা-সমাবেশে নিধেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করা হচ্ছে। যেকোন ধরণের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের বহনের গাড়ি বন্ধ থাকলেও বাধা উপেক্ষা করে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীর দাবিতে সকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- অনতিবিলম্বে আকটকৃত সকল শিক্ষার্থীকে নি:শর্তে মুক্তি দিতে হবে; সকল বৈষম্য দূর করে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির মান দিতে হবে; এছাড়া এ সকল দাবি না মেনে নিলে আমরণ অনশন অব্যহত থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গতকাল একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ দুই জেলার প্রশাসন এবং গোয়েন্দাদের সাথে কথা বলা হচ্ছে।’


সর্বশেষ সংবাদ