আবরার স্মরণে বৈশাখ বরণ, নিস্তব্ধতার সাজে বিইউপি
- ফরহাদ কাদের
- প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৫৩ PM , আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৭:৫৪ AM
আবরার আহমেদ চৌধুরী। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক ছাত্র। ১৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকায় বাস চাপায় মারা যান সম্ভাবনাময়ী এই তরুণ। যাতে শোক নেমে আসে তার পরিবার, সহপাঠী, বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা শিক্ষামহলে। আবরারের চলে যাওয়ার পর এখনো মাস পেরোয়নি। মাত্র ২৫ দিন হয়েছে। অল্প এ সময়ে অনেকেই তাকে ভুলে গেলেও মনে রেখেছে তার বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু মনেই রাখেনি, কাল অনুষ্ঠেয় বৃহৎ বৈশাখী উৎসবেও প্রতিটি ক্ষণে আবরারকে স্মরণ করার ব্যবস্থা করেছে তারা। বৈশাখের সাজ সাজ রবের মাঝে ‘জেব্রা ক্রসিং’ এবং তার মাঝে ‘রক্তের রং লাল’ একে আবরারকে স্মরণ করবেন তারা।
পহেলা বৈশাখের আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আঁকা আল্পনায় এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা জানান, বিইউপি-তে আসার জন্য আবরার জেব্রা ক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হচ্ছিলেন। সাধারণত জেব্রা ক্রসিংয়ের সামনে চলন্ত বাসের গতি নিয়ন্ত্রিত রাখতে হয়। জেব্রা ক্রসিং হয়ে পথচারীরা রাস্তা পারাপার হন। কিন্তু গতি না কমিয়ে আবরারের ওপর সু-প্রভাত বাস উঠিয়ে দেন চালক সিরাজুল ইসলাম। পিচঢালা সড়কে আছড়ে পড়ে স্পটেই মারা যান আবরার। মূলত সে বিষয়টাই আমাদের বৈশাখী আল্পনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মো. মাহী বিষয়টিকে ব্যাখা করছেন এভাবে, ‘জেব্রা ক্রসিং-এর উপর আবরার হত্যার রেড সিম্বল।’ সাদিয়া রহমান বুশরা বলছেন, ‘এটা নিস্তব্ধতার সাজ। চোখে পড়ার মত সাজ।’
আবরার স্মরণে আকা আল্পনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। যা নিয়ে আব্দুল্লাহ ইমরান লিখেছেন, ‘জেব্রা ক্রসিং সাদা দাগগুলো সেদিন এভাবেই আব্রারের রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তুমি উত্তম প্রতিদান দিও।’ কাওসার আহমেদর বক্তব্য, ‘এই সেই জেব্রা ক্রসিং; যেখানে ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল এই রাজপথ।’ ছবি দেখে সুখ শিকদার নামে একজন লিখেছেন, ‘ফাল্গুনে ঠিক এই জায়গাটায় স্টেজ করা হয়েছিল। আবরার একটা হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে এসেছিল। সামনেই বসা ছিলাম। ছেলেটা এখনও চোখে ভাসছে হলুদ পঞ্জাবী পরা। এইবারও একই জায়গায় উৎসব হবে। শুধু আবরারটা নেই। থাকলে হয়ত লাল বা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে আসত।’
বুক ভরা স্বপ্ন ছিল আবরারের। মেডিকেল কলেজে সুযোগ না হওয়ায় ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফোশনালস (বিইউপি)-এর ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনশিপ বিভাগে। ইচ্ছা ছিল আগামীতে আবারও মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিবেন। কিন্তু আবরারের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তার আগেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
আবরারের বন্ধুদের ভাষ্য, ক্লাসে স্যারদের কোনও প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগে আবরারের মুখে উত্তর চলে আসত। মনে হতো পাঠ্যবইয়ের সব পড়া হয়ে গেছে তার। সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছেলে হওয়ার পরও কোনও অহঙ্কার ছিল না ওর মাঝে। পড়াশোনায় কোনও সমস্যা মনে হলে যে কোনও সময় নক করলেই সহজভাবে সমাধান দিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার সঙ্গে ওর সুসম্পর্ক ছিল। আবরারকে সহপাঠী, সিনিয়র ও স্যাররা অনেক ভালোবাসতেন।
বন্ধুরা আরও জানান, ইতিহাস ও রাজনীতির প্রতি অনেক কৌতূহল ছিল আবরারের। তাই এ সংক্রান্ত অনেক বই পড়তো। দেশ-বিদেশের সকল খবর রাখত। বিভিন্ন বই পড়ে তা আমাদের সঙ্গে আবার শেয়ার করত। ও অনেক শান্ত স্বভাবের ছিল। কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে দেখিনি। সবাই অনেক ভালোবাসতো আবরারকে।
আবরারের সঙ্গে সবসময় একটি কলম থাকতো। সে যখনই কথা বলত হাতের কব্জি ঘুরিয়ে কলমের মাথা নেড়ে নেড়ে কথা বলতো। ওর এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক হাসাহাসিও করতাম। ওর মৃত্যু, এভাবে চলে যাওয়া আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি না।