০২ জুন ২০২৫, ১৯:৪৭

সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থিদের উপস্থিতি, পদত্যাগের দাবি ‘জবি ঐক্যের’

জবি লোগো  © ফাইল ফটো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছেন আওয়ামী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত সিন্ডিকেট সদস্যরা। আজ সোমবার (২ জুন) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ করেন আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত কয়েকজন সিন্ডিকেট সদস্য। এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের যৌথ প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্য।’ তারা তাৎক্ষণিকভাবে এসব ‘ফ্যাসিস্ট দোসরদের’ পদত্যাগ দাবি করেন এবং প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে চারজন সিন্ডিকেট সদস্যের নাম উল্লেখ করে তাঁদের অপসারণের দাবি জানানো হয়। তারা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন, জবির আইন অনুষদের ডিন খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা। স্মারকলিপি প্রদান করার পরপরই অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা উপাচার্যের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছে সিন্ডিকেট থেকে স্বৈরাচারপন্থি ও ফ্যাসিবাদী ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়ে নতুনভাবে সিন্ডিকেট গঠন করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৫ অনুযায়ী, সিন্ডিকেটে ১৬ জন সদস্য থাকার কথা। এর মধ্যে রয়েছেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, তিনজন ডিন, একাডেমিক কাউন্সিল থেকে তিনজন, ইউজিসি থেকে একজন, শিক্ষা ও গবেষণা-প্রতিষ্ঠান থেকে মনোনীত দুইজন, সরকার মনোনীত দুইজন যুগ্ম সচিব ও দুইজন শিক্ষাবিদ।

জানা গেছে, আজকের সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সানজিদা ফারহানা, লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন, আইন অনুষদের ডিন খ্রীষ্টিন রিচার্ডসন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান, ড. মো. মোশাররফ হোসেন, প্রাণরসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন, জবির শিক্ষক ড. রইছ উদ্দিন এবং সরকার মনোনীত দুই যুগ্ম সচিব।

অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থি ‘হলুদ প্যানেল’ থেকে ডিন নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০২১ সালে। তাঁর বিরুদ্ধে একাডেমিক সভায় অশালীন ভাষা ব্যবহার এবং সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। ড. এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান ২০১৫ সালে জবির আওয়ামীপন্থি শিক্ষক সংগঠন ‘নীলদল’-এর সভাপতি এবং ২০১৭ সালে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বর্তমানে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমছে

অন্যদিকে, ড. লাইসা আহমেদ লিসা ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক। তার শাশুড়ি ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সনজিদা খাতুন ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছায়ানটের পদ ও সম্পর্ক ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব খাটিয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে জবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এখনও স্বৈরাচারের দোসর কীভাবে বসে? আমাদের ত্যাগ কি এই জন্য ছিল? একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমি এটা হতে দিতে পারি না। দোসরদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সেক্টর থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের মুক্ত করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম। অথচ আজ তাদেরকে নিয়েই সিন্ডিকেট মিটিং বসানো হয়েছে। আমরা চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে জুলাই আন্দোলনের পক্ষে থাকা শক্তিকে নিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করতে হবে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা নূর নবী বলেন, ‘সিন্ডিকেটে এখনো এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা অতীতে স্বৈরাচারী সরকারের দমনমূলক নীতির সহযোগী ছিলেন। তারা ছাত্রদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন, পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন। এমন ব্যক্তিদের প্রশাসনিক ক্ষমতায় রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা দাবি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে এসব সহযোগীদের অপসারণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হোক মুক্ত চিন্তার নিরাপদ স্থান, কোনো শাসকের নয়।’