অনাবাসিকদের দখলে হল, শূন্য ফান্ডে বেতন বন্ধ কর্মচারীদের

বঙ্গবন্ধু হলে বৈধ ছাত্র ৩২ জন; মুখতার হলে ১শ ৫০

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ মুখতার ইলাহী হল অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দখলে থাকায় বৈধ বরাদ্দপ্রাপ্ত ছাত্ররা সিটে উঠতে পারছে না। হল প্রশাসন কয়েক দফায় অনাবাসিকদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা মানছে না। এদিকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা সিট দখল করে থাকায় ফি আদায় করতে পারছে হল প্রশাসন। ফলে হলের ফান্ডে অর্থাভাবে চার-পাঁচ মাস ধরে বেতন প্রদান করা হয়নি কর্মচারীদের।

জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্বিবিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ৩টি আবাসিক হল রয়েছে। মেয়েদের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে কোনো সমস্যার অভিযোগ না থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে বিস্তর নৈরাজ্য বিরাজ করছে। ইতোপূর্বে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হলের অধিকাংশ বৈধ শিক্ষার্থীকে বিভিন্নভাবে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরপর বৈধভাবে হলে উঠতে পারেনি কোনো শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হল এবং একই বছরের ২৮ অক্টোবর শহীদ মুখতার ইলাহী হল উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরজুড়ে মেধার ভিত্তিতে দুই হলে প্রায় ৭শ শিক্ষার্থীকে আবাসিকতার সুযোগ দেয়া হয়। এরপর হলে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বৈধ শিক্ষার্থীদের মারধরসহ বিভিন্নভাবে হল থেকে বের করে দেয় কতিপয় ছাত্রনেতা। দীর্ঘসময় অতিক্রান্ত হলেও নতুন করে আসন বরাদ্দ দেয়নি হল প্রশাসন।

খাতা-কলমে দুই হলে প্রায় ৪শ আসন ফাঁকা থাকলেও বাস্তবে আসন সংখ্যার চেয়ে ওই দুই হলে অবস্থানকারীর সংখ্যা দ্বিগুন। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শহীদ মুখতার ইলাহী হলে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা আসন ছেড়ে না দেয়ায় নতুনভাবে আবাসিকতার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই হলে উঠতে পারেনি। বর্তমানে ওই হলের মোট ২শ ৪০টি আসনে ১শ ৫০ জন শিক্ষার্থী বৈধভাবে অবস্থান করছে।

বঙ্গবন্ধু হল সূত্রে জানা যায়, ওই হলে ৩শ ৫৫টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩২ জন বৈধভাবে অবস্থান করছেন। আর নতুন করে বরাদ্দ দেয়া ৬৯ জনের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ২৩ জন। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হলে উঠতে হল প্রশাসনের কোনো অনুমতির দরকার হয় না। কয়েকজন ছাত্রনেতার আনুকূল্যে থেকে আসনপ্রতি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিলেই হলে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ভর্তির সময় আবাসিক ফি জমা দিয়েও আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে না। দ্রুত হলে নতুন করে আসন বরাদ্দের দাবি জানান তারা।

এদিকে হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থীর অভাবে হলের ফি আদায় না হওয়ায় ফান্ড শূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে ৪/৫ মাস ধরে বেতন বঞ্চিত রয়েছে প্রায় ২৫ জন কর্মচারী। বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কর্মচারী বেল্লাল হোসেন বলেন, হল থেকে যে বেতন দেয়া হয়, এর উপর আমার পরিবার নির্ভরশীল। দীর্ঘ ৪ মাস থেকে বেতন না পাওয়ায় আমার পরিবারকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন যদি এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আমার জন্য অনেক ভালো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট (চলতি দায়িত্ব) তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, যাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে অথবা ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে হল ছাড়ার জন্য ইতোপূর্বে তিনবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী এ নির্দেশনা মানলেও বাকিরা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে। তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে সর্বশেষ একটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। সেখানে ৭ দিনের মধ্যে অনাবাসিকদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শহীদ মুখতার এলাহী হলের প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমান (চলতি দায়িত্ব) জানান, অনাবাসিকদের কারণে নতুন করে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্বদিচ্ছা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, অনাবাসিকদের কারণে দীর্ঘ ৫ মাস থেকে হলের কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।


সর্বশেষ সংবাদ