বেরোবি
ডাইনিং বন্ধ: ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা, বেতন বন্ধ কর্মচারীদের
- সৌম্য সরকার, বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:১৮ PM , আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০৪:৪৬ PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শহীদ মুখতার ইলাহী হল ডাইনিং গত ১৯ দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনবেলা খেতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পার্কমোড় কিংবা লালবাগে যেতে হচ্ছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের। খাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে হলটিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানায়, দীর্ঘদিন হলের ডাইনিং বন্ধ থাকায় খাওয়া নিয়ে বড় ধরণের সমস্যায় পড়েছেন তারা। ক্যাম্পাসের ভিতরে কোন ধরণের দোকান না থাকায় অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তাদের খেতে যেতে হয়। এদিকে কাস্টমার বেশি পাওয়ায় স্থানীয় দোকানদারেরা খাবারের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। খাবারের দাম বৃদ্ধি পেলেও খাবারের মান বৃদ্ধি পায়নি দাবি শিক্ষার্থীদের। অনিরাপদ খাবার খেয়ে অনেকেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন বলেও জানায় তারা।
শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। হলের ডাইনিং বন্ধ থাকায় হলে অবস্থানরত প্রায় ৩শ শিক্ষার্থীকে বাইরে থেকে অধিক মূল্যে খাবার খেতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত খরচ বহন করা তাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরো বলেন, এখন অধিকাংশ বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিন্তু খাবারের জন্য তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। এতে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি ও সময়ের অপচয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বারবার হল প্রভোস্টকে ডাইনিং চালু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু তিনি ডাইনিং চালু করার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। তিনি হল প্রভোস্টকে ডাইনিং চালু করতে বলেছেন।
হল সূত্রে জানা গেছে, শীতকালীন অবকাশ শেষে গত ৫ জানুয়ারি থেকে হল খোলা হলেও ডাইনিং চালু হয়নি। কেন চালু হয়নি এ বিষয়ে তারা বলেন, গত চারমাস যাবৎ হলে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীদেরকে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোন ধরণের নিয়ম না মেনেই হলে অবস্থান করছেন। সময়মত তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছেনা। আবার ডাইনিং চালাতে গিয়ে যে পরিমাণ রান্না হয় তা শেষ হয়না। হলের অফিস সূত্রে জানা যায়, হলের বৈধভাবে আবাসন ক্ষমতা ২’শ ৪০ জন হলেও বর্তমানে রয়েছে ১’শ ৭০ জন। বৈধভাবে শিক্ষার্থীদেরকে তুলতে না পারায় প্রতিমাসে হল চালাতে যে ব্যয় হয় তা উত্তোলন করা যাচ্ছেনা।
এ বিষয়ে হলটির প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হলের মধ্যে নানা ধরণের সমস্যা বিদ্যমান। হল চালাতে প্রতিমাসে যে টাকা ব্যয় হয় তা হলের ফান্ডে নাই। তিনি জানান, হল চালাতে প্রতি মাসে অন্তত ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হয় যা আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। এখন হলের মধ্যে বৈধভাবে অবস্থান করা আবাসিক শিক্ষার্থী কম হওয়ায় মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন হয় যা দিয়ে হল চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। নতুন করে কেন আবাসিক শিক্ষার্থী তোলা হচ্ছেনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু শিক্ষার্থী আছে যাদেরকে বৈধভাবে সীট দিলেও দখল করে দিতে পারিনি। অবৈধভাবে প্রতিটি রুমই দখল করে আছে শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় নতুন করে কিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করাবো?
তিনি আরো জানান, আগে ভর্তি হওয়ার সময় হল বাবদ যে টাকা নেওয়া হতো তা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেভিনিউ খাতে চলে যায়। তা থেকে হল কিছুই পায়না। আবার প্রতিমাসে আবাসিকদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হতো তাও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হচ্ছেনা কোন ধরণের জরিমানা। হল চালাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ভর্তুকিও দেওয়া হচ্ছেনা। তবে ডাইনিং যেন চালু হয় এ ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।