মধ্যরাতে শিক্ষার্থীদের মারামারি : ঠিক কী ঘটেছিল ইবি ক্যাম্পাসে
- ইবি প্রতিনিধিঃ
- প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৯ AM , আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৯ AM

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ এবং আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রক্টরসহ দুই বিভাগের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যায় বাসে ‘সিট ধরা’কে (আসন সংরক্ষণ) কেন্দ্র করে ঘটা ঘটনাটি মধ্যরাতে সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঠিক কী ঘটেছিল ইবি ক্যাম্পাসে, সেই প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে সামনে আসছে।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল রাতে। কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে আগত ডাবল ডেকার সানন্দা বাসের দ্বিতীয় তলায় সিট ধরাকে কেন্দ্র করে প্রথমে আল ফিকহ বিভাগের ১৯-২০ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব এবং আইন বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। পরবর্তী সময়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অপর সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানের সঙ্গেও কথা-কাটাকাটি হয় রাকিবের। একপর্যায়ে সুমন রাকিবকে সিনিয়র হাসানের সঙ্গে উচ্চবাচ্য না করতে বলে। এ সময় সুমন আগে রাকিবের দিকে তেড়ে গেছেন বলে অভিযোগ রাকিবের। এ সময় রাকিব ও সুমনের মধ্যে হাতাহাতি হলে রাকিবের ঘুষিতে সুমনের ঠোঁট ফেটে যায় এবং শার্টের বোতাম ছিঁড়ে যায়। পরে ভুক্তভোগী সুমন প্রক্টরকে ফোন করে বিষয়টি জানালে প্রক্টর ক্যাম্পাসে আসার পর সমাধানের আশ্বাস দেন। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী সুমন তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানালে বাস ক্যাম্পাসে ঢোকার পরে বাস ঘিরে হট্টগোল শুরু হয়।
পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীসহ উভয় পক্ষের ৫ জন করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান, আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল, অধ্যাপক শাহজাহান শুভ, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহসমন্বয়ক তানভীর মন্ডল, ভুক্তভোগী সুমনের মা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রক্টরিয়াল বডি ও উপস্থিত শিক্ষকেরা উভয় পক্ষের কথা শুনে অভিযুক্ত রাকিবকে বকাঝকা করে ভুক্তভোগী সুমন ও তার মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন। রাকিব তা মেনে নিয়ে সুমন ও তার মায়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চায়। ক্ষমা চাওয়ার পরে প্রক্টর তাদের দুজনকে কোলাকুলি করিয়ে দেন।
পরে প্রক্টর অফিস থেকে বেরিয়ে অনুষদ ভবনের নিচে এসে বিষয়টি রাকিবকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান। কিন্তু আগে থেকেই গেটের বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত না মেনে প্রতিবাদ জানালে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। শিক্ষকদের ঘিরে নিয়ে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের তর্কযুদ্ধের একপর্যায়ে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি এবং তারপর সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষটি অনুষদ ভবনের সামনে থেকে বটতলা ও ডায়না চত্বর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় আইন বিভাগের জুবায়েরকে কিল-ঘুষি দিলে তিনি আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ ছাড়া আইন বিভাগের সোহান, কবির, বাধন, আকাশ, রাকিবসহ উভয় বিভাগের প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। মারামারি থামাতে গিয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান ও আল হাদিস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান আহত হন। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিষদের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, ‘সামান্য ঘটনা এত দূর গড়ানো দুর্ভাগ্যজনক। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সমাধান করেছিলাম। এরপর মারামারির যে ঘটনা ঘটেছে, তা হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব।’