গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ বেড়েছে ৫ গুণ

ইউজিসি লোগো
ইউজিসি লোগো  © টিডিসি ফটো

সমৃদ্ধ গবেষণা পোক্ত করে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়। পাঠ্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। তবে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় একটি অংশ গবেষণায় আগ্রহী নয় বলে অভিযোগ ছিল। এর পরিবর্তে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন এবং বিদেশ ভ্রমণেই ব্যস্ত থাকতেন তারা। তবে সেই দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়েছে। গবেষণায় আগ্রহ বেড়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের প্রেক্ষাপট বদলাতে শুরু করে। পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে শিক্ষকদের গবেষণার মনোভাবেও। বর্তমানে গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন শিক্ষকদের বড় একটি অংশ। গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক বছরের তুলনায় শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউজিসিতে গবেষণা সহায়তা ফান্ডের জন্য জমা হওয়া আবেদনের সংখ্যা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

‘শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ বাড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। বিগত সময়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক না হলে ইউজিসির গবেষণা সহায়তা ফান্ড পাওয়া যেত না। ফলে শিক্ষকরা আবেদনই করতেন না। তবে বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য আবেদনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে’—অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম

এ বিষয়ে ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ইউজিসির গবেষণা সহায়তা অনুদান পেতে আড়াই হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এই আবেদনগুলো বিশেষজ্ঞরা যাচাই-বাছাই করছেন। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। আবেদন যাচাই শেষে অনুদানপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।’

জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা অনুদান পেতে ৪০০-৫০০ শিক্ষক ইউজিসিতে আবেদন করতেন। এই আবেদনগুলো পর্যাপ্ত ছিল না বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তবে অভ্যুত্থানের পর আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষক গবেষণা অনুদান পেতে ইউজিসিতে আবেদন করেছেন। সে হিসাবে শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ বেড়েছে ৫ গুণ।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষকদের ‘রিসার্চ সাপোর্ট ফান্ড’ বা গবেষণা সহায়তা অনুদান দিতে বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইউজিসি। তবে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে আবেদনগ্রহণসহ সব কার্যক্রম থামকে যায়। পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় আবেদনগ্রহণ করে ইউজিসি।

‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষকরা রাজনীতি এবং বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর বিদেশ ভ্রমণ এবং শিক্ষক রাজনীতি অনেকটাই কমে গেছে। এজন্য শিক্ষকরা এখন গবেষণায় মনোযোগ দিচ্ছেন। যে কারণেই শিক্ষকরা গবেষণায় মনোনিবেশ করুক না কেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে’— ইউজিসি কর্মকর্তা

ওই সূত্র আরও জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মৌলিক গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা পাবেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গবেষণা প্রস্তাব অনুমোদন হলে এককালীন তিন লাখ টাকা দেওয়া হবে। তবে এক বছরের মধ্যে গবেষণার যথাযথ সম্পাদনা করতে হবে। ৩০০-৪০০ শিক্ষককে গবেষণা অনুদান দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে ইউজিসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষকরা রাজনীতি এবং বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর বিদেশ ভ্রমণ এবং শিক্ষক রাজনীতি অনেকটাই কমে গেছে। এজন্য শিক্ষকরা এখন গবেষণায় মনোযোগ দিচ্ছেন। যে কারণেই শিক্ষকরা গবেষণায় মনোনিবেশ করুক না কেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান বৃদ্ধি করবে।’ 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় রাজনীতি ছাড়া পদোন্নতি-পদায়ন হত না শিক্ষকদের। এমন কি প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এই বিষয়গুলো থেকে শিক্ষকরা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন। যা দেশের শিক্ষার উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষকদের গবেষণায় আগ্রহ বাড়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। বিগত সময়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষক না হলে ইউজিসির গবেষণা সহায়তা ফান্ড পাওয়া যেত না। ফলে শিক্ষকরা আবেদনই করতেন না। তবে বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য আবেদনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় তারা দলীয় কাজে ব্যস্ত থাকতেন। গবেষণা করার সময় পেতেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মানোন্নয়ন সেভাবে হয়নি। আশা করছি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা মৌলিক গবেষণায় মনোযোগ দেবেন। এই গবেষণা দেশ এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।’


সর্বশেষ সংবাদ