বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কাল

ঢাবি ও সাত কলেজ
ঢাবি ও সাত কলেজ  © লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে আগামীকাল সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।

আজ রবিবার (২০ অক্টোবর) সাত কলেজ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়। দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তিনটি কর্মপরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে, এ সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে এ কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা বিগত ৮ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বিপরীতে এসব কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে নেমে আসে চরম বিশৃঙ্খলা। এক কথায় শিক্ষার মানের উন্নতির পরিবর্তে ঢাবি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

‘‘আমরা মনে করি, দীর্ঘদিনের অধিভুক্তির পরও যেখানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার মানের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, সেখানে এমন অধিভুক্তি ধরে রাখা অর্থহীন।’’

এতে আরও বলা হয়, ঢাবির অধীনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সামনে বর্তমানে যেসব সমস্যাগুলো বড় আকারে দেখা দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের অভাব। এ ছাড়া বিভাগভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, গবেষণার সুযোগের অপ্রতুলতা, অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডারের অনুপস্থিতি, শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট, ল্যাব সংকট, আবাসন সমস্যা, পরিবহণ সংকট, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব, অ্যাকাডেমিক সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকাসহ পরীক্ষা মূল্যায়ণে গণহারে ফেল করিয়ে দেওয়া—এসব সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে সমাধানহীনভাবে চলছে।

‘‘ফলস্বরূপ, সাত কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে বারবার রাজপথে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে বারবার একে অপরের দিকে দায়িত্ব ঠেলে দিয়ে এসব সমস্যা জিইয়ে রেখেছেন। কিন্তু আমরা আর এমন জটিলতার ধারাবাহিকতা চাই না। আমরা সমাধান চাই।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে নীলক্ষেত মোড়ে কর্মসূচির কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা এখন সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি তুলেছেন। এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো থেকেই কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাইনি। তাদের এমন নিশ্চুপ অবস্থান আমাদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে।

‘‘স্বায়ত্তশাসিত বা স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে তিনটি কর্মপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের লক্ষ্যে সোমবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর নীলক্ষেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি আহ্বান করেছি।’’

তিনটি কর্মপরিকল্পনা হলো-সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে; সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধু মাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন; সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটিলতার কোনো ধরনের পরিবেশ তৈরি না হয়।

ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আব্দুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে দাবি বাস্তবায়ন চেয়েছি। এ লক্ষ্যে আমরা শিক্ষা প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি। আমাদের দাবির বিষয়ে তাদের সবাইকে জানিয়েছি। ঢাকা কলেজে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের দাবির বিষয়টি আলাদাভাবে গণমাধ্যমকে জানিয়েছি। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে আমরা শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। আমরা এখনো শান্তি চাই। আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি বাস্তবায়নে আগামীকাল সোমবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবো।


সর্বশেষ সংবাদ