ইবির একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির, বছর ছাড়িয়েছে সেশনজট

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

আড়াই মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। জুলাই বিল্পবের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনিক প্রায় সব পদ শূন্য। উপাচার্য নিয়োগ কবে হবে, তাও অনিশ্চিত। ফলে একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সেশনজট আরো দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্রুত স্থবিরতা কাটিয়ে উঠতে যোগ্য উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, গত জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন এবং জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের ফলে ইবির সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর ছাত্র আন্দোলনের সময় বন্ধ থাকে ক্যাম্পাস। দীর্ঘ আড়াই মাসের অধিক সময় ধরে সশরীরে ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে থাকায় দীর্ঘ সেশনজটের আশঙ্কা বাড়ছে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। দ্রুত স্থবিরতা কাটাতে শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান তারা।

একাডেমিক স্থবিরতা দূরীকরণে যোগ্য, দুর্নীতিমুক্ত, সংস্কারমনা ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে প্রতিদিনই মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করছে শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে সেশনজট ৭-৮ মাস থেকে শুরু করে কিছু বিভাগে বছর পার হয়েছে।

এদিকে করোনার প্রভাবে যে সেশনজট সৃষ্টি হয়েছিল, তা অনেক বিভাগই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এছাড়া নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা না নেওয়া, পরীক্ষার তারিখ পেছানো, ফল প্রকাশে কচ্ছপগতি, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ত সময় পার করা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ নানা কারণে এ সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ফলে ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তাসহ নানা কারণে হতাশায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ অন্তত ১২ জন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যত পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালন করেছেন থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী। 

এরপর থেকে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) থেকে সশরীরে শুধু ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলা, আইন, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, সিএসই, ইংরেজি ও জিওগ্রাফী অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা দ্রুত সেশনজট নিরসনসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। দ্রুত সম্ভব এ সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। 

প্রত্যেক বিভাগেরই মূল দাবি ছিল সেশনজট কমানোর। একাডেমিক স্থবিরতা দূরীকরণে যোগ্য, দুর্নীতিমুক্ত, সংস্কারমনা ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে প্রতিদিনই মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করছে শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে সেশনজট ৭-৮ মাস থেকে শুরু করে কিছু বিভাগে বছর পার হয়েছে।

আরো পড়ুন: দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে প্রাণের ক্যাম্পাসে পদচারণা

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রহমান বলেন, আমরা ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী হয়েও অনার্স পাস করতে পারিনি। অথচ আমার বন্ধুরা পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছে। আমরা সেশনজটের অভিশাপে জর্জরিত। এ জট কাটিয়ে উঠুক এটাই প্রত্যাশা।

ইবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য না থাকায় একাডেমিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছু পিছিয়ে পড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে পড়ছে। অবিলম্বে একাডেমিক ও প্রশাসনিক স্থবিরতা দূরীকরণে যোগ্য, দুর্নীতিমুক্ত, সংস্কারমনা ও শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।

এ বিষয়ে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, আমরা সব বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি। বিভাগগুলো তাদের একাডেমিক কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।


সর্বশেষ সংবাদ