জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

এক যুগ পর চাকরিতে ফেরার স্বপ্ন দেখছে ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

বিগত ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি হারানোর পর তাদের অনেকে অমানবিক কষ্ট ও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বাকিরা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছেন। সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরিচ্যুত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। অন্যদিকে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে পাশে দাঁড়িয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরিচ্যুত এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি জানান। এ নিয়ে তারা আন্দোলনেও নেমেছেন। এই প্রেক্ষিতে গত ৯ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের সভায় ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে চাকুরিচ্যুত ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে রিভিউ পিটিশন দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। 

“আমাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোন অভিযোগ দেখানো হয়নি। তবে আমাদের মোট তিনটি সার্কুলারে যারা নিয়োগ পেয়েছে, বলা হয় সে সার্কুলারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ হয়নি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল তাতে আমাদের সমস্যা কোথায়। একটা আদেশে প্রায় ১ হাজার মানুষের চাকরি চলে গেল।”

জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি যথাযথ অনুসরণ করে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে বিভিন্ন স্মারকে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর ২০১১ সালে কতিপয় অসাধু কর্মকতা ও কর্মচারী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে আদালতকে বিভ্রান্ত করে তাদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।  এরপর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় ২০১১ সালে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। যা ছিল চাকরিবিধি বহির্ভূত-অনিয়মতান্ত্রিক ও অনৈতিক।

এর আগে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিয়োগ অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানিয়ে সাবেক এমপি অ্যাড. ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট একটি রিট মামলা দায়ের করেন। সে সময় দীর্ঘ শুনানির পর ২২ আগস্ট ২০০৬ তারিখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন। পরে গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. আকম মোজাম্মেল হক (ওই রায়ের বিপরীতে) ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রিভিউ মামলা দায়ের করলে আদালত কর্মচারীদের চাকরি থেকে অপসারণের রায় দেন।

আরও পড়ুন: ইউজিসি সদস্য হলেন ঢাবির দুই অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন ও আনোয়ার হোসেন

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চাকরি রক্ষা কমিটির ব্যানারে ৮ আগস্ট গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা। একই দাবিতে ৭ আগস্ট বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিবিধি যথাযথ অনুসরণ করে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে বিভিন্ন স্মারকে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর ২০১১ সালে কতিপয় অসাধু কর্মকতা ও কর্মচারী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে আদালতকে বিভ্রান্ত করে তাদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

জানতে চাইলে চাকরি পুনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে নায়েমে (জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি) ছিলাম। সেখানে এর থেকে ভালো সুযোগ সুবিধা থাকলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি থেকে অবসরের সময় কিছুটা বেশি হওয়ায় চলে আসি। কিন্তু আমাদের সাথে বছরের পর বছর অন্যায় হয়েছে। জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূর্ণ না হওয়াসহ কিছু কারণে আমাদের চাকরি যায়। তিনি সর্বশেষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত ছিলেন।

নুরুল আমিন আরও বলেন, তখন বিচারপতি মানিক আমাদের এই মামলার সর্বশেষ রায় দেন। গাজীপুরের সাবেক এমপি মোজাম্মেল হক মামলার সাথে কোন প্রকার সংযুক্ত না থেকেও মামলা ২০০৬ সালে খারিজ হওয়া মামলাটির পুনরায় আপিল করেন। পরে বিচারপতি মানিক এক রাতের মধ্যে রায় দেন। আমরা ইদের ছুটি থেকে ফিরে জানতে পারি চাকরি নেই। এত বছর এই অন্যায় নিয়ে কিছু বলার সুযোগ ছিল না। আমরা চাই, অন্তত এখন যেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।

চাকরি হারানো আরেকজন নাসির আহমেদ রুবেল। যিনি সে সময়ে উপাচার্যের দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। তনি জানান, আমাদের বিরুদ্ধে বিশেষ কোন অভিযোগ দেখানো হয়নি। তবে আমাদের মোট তিনটি সার্কুলারে যারা নিয়োগ পেয়েছে, বলা হয় সে সার্কুলারে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পূরণ হয়নি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল তাতে আমাদের সমস্যা কোথায়। একটা আদেশে প্রায় ১ হাজার মানুষের চাকরি চলে গেল। এটা সুস্পষ্ট বৈষম্য, আমরা পুনরায় আদালতের দারস্থ হয়েছি। আশা করছি আদালত অন্যায়ের বিরুদ্ধে রায় দিবেন।


সর্বশেষ সংবাদ