ইবির শীর্ষ ৫ পদ শূন্য থাকায় কার্যক্রমে স্থবিরতা, যোগ্য উপাচার্য চান শিক্ষার্থীরা
- রেদওয়ান রাকিব, ইবি
- প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২০ AM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২০ AM
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারাদেশে রোববার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। তবে শীর্ষ পাঁচ পদ শূন্য থাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষা কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। দ্রুত যোগ্য ও সৎ উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জারিকৃত অফিস আদেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৮ আগস্টে চালুর নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূইয়াও পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। তবে উপাচার্যের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি গ্রহণ করলেও অন্য দুজনের পদত্যাগপত্র এখনও গ্রহণ করেননি বলে জানা গেছে।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সিন্ডিকেট সভায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষা কার্যক্রম ও হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ জন্য নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে ছাত্র উপদেষ্টা এবং প্রক্টরও পদত্যাগ করেছেন। প্রশাসনের শীর্ষ পাঁচ পদ শূন্য থাকায় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তাও হুমকিতে রয়েছে। জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সিন্ডিকেট সভায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরর শিক্ষা কার্যক্রম ও হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এ জন্য নিয়মানুযায়ী সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম খোলার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন (ধারা-১১) অনুযায়ী উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা আহবান করতে পারেন। তাই ইবিতে উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবে শুরু হচ্ছে না। এতে সেশনজটে উদ্বেগে আছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, করোনা পরবর্তী এক বছর সেশনজটে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সেটি কাটিয়ে না উঠতেই ফের দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উপাচার্যহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। তারা চাকরির প্রতিযোগিতায় আগে থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। ফলে ভালো চাকরি পাওয়া এখন স্বপ্নের মতো। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্য নতুন উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা এবং স্বৈরাচার পতন হয়েছে। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়েছেন। আমি চাই, দ্রুত যোগ্য ও সৎ উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক নিশ্চিত করা হোক। আমরা উপাচার্য ও শিক্ষকদের এ ক্ষতি পোষাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি জানাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ডিনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসির পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় ক্লাস-পরীক্ষার ব্যাপারে ডিনস কমিটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ফলে ক্লাস কখন চালু হবে বলা যাচ্ছে না।
শিক্ষকরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেই। কোনো ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? আগে প্রশাসন প্রতিস্থাপন, তারপর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় চালু হোক। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলেও জানান তারা।
আরো পড়ুন: প্রশাসনিক শূন্যতায় জাবি ক্যাম্পাসে বাড়ছে ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তারা খুব শিগগিরই সংকট কাটিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা রাখি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্লাস-পরীক্ষা এবং হলসমূহ বন্ধ হয়েছে। তাই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আশা করি, সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেবে সরকার।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি পদত্যাগপত্র জামা দিয়েছি। এরপরও যদি সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনের বলা হয়, তাহলে দায়িত্ব পালন করব।’
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও হলগুলোয় শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছেন। হলগুলোর নিরাপত্তায় তারা শিফট করে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধায় সহযোগিতাও করছেন তারা।