শিক্ষক আন্দোলনে অচল বেরোবি
‘ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাবে জানলে বাসা থেকে আসতাম না’
- বেরোবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৫ PM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৫ PM
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। স্থবিরতা নেমে এসেছে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে। বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা। অ্যাকাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দপ্তরেরও বিরাজ করছে একই অবস্থা। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরিবহন সচল থাকলেও শিক্ষার্থীদের চলাচলের বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গল (২ জুলাই) সকালে অ্যাকাডেমিক ভবনগুলো খুললেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কক্ষগুলো তালাবদ্ধ রয়েছে। কর্মচারীরা আসলেও তারা অলস সময় পার করছেন।
এদিকে, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশের দীর্ঘ ছুটির পর শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে আবারও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চাপা অসন্তোষ। রাকিবুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, গত সপ্তাহে আমি দক্ষিণবঙ্গ থেকে ক্যাম্পাসে এসেছি। বন্ধের পর ভালোভাবে ক্লাস শুরু না হতেই আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে জানলে এখন ক্যাম্পাসে আসতাম না।
জোবায়ের হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। আজকে পরীক্ষা ছিল, কিন্তু স্থগিত হয়ে গেছে। কবে যে আবার পরীক্ষা হবে? পরীক্ষার মাঝে এ অনিশ্চয়তা ভালো লাগে না।
সোনিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে আসতে না আসতেই ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে একদিকে রংপুরে অটো ভাড়া বাড়িয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসও বন্ধ রয়েছে। টিউশনসহ অন্যান্য কাজের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে। তাই এখানে থেকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।
নাইমুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেক চেষ্টার ফলে আমাদের ক্যাম্পাস সেশনজটমুক্ত হয়েছে। এ আন্দোলন দীর্ঘ মেয়াদি হলে আবারও সেশনজটে পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে গত ০১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। এ কর্মসূচির সাথে সংহতি জানিয়ে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
কর্মবিরতির বিষয়ে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মন্ডল লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, গত ১৩ মার্চ জারিকৃত ‘প্রত্যয় স্কিম’ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন কার্যকর না হওয়ায় পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বেরোবিতে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম ও প্রভোস্ট অফিস বন্ধ থাকবে।
শিক্ষকদের কর্মবিরতির ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি আমলে নিয়েছেন বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. বিজন মোহন চাকী। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শিক্ষার্থীদের সাময়িক অসুবিধা হলেও সার্বিকভাবে এটা মঙ্গলজনক। এতে যদি শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়েন, তাহলে কয়েক মাসে সেমিস্টার শেষ করে পুষিয়ে দেয়া হবে।