ইফতারে পঁচা খাবার পরিবেশনকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তপ্ত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
ইফতারে পচা বেগুনি পরিবেশনকে কেন্দ্র করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ২ নং গেটে বন্ধ ছিল সকল দোকানপাট। দিনভর উত্তপ্ত ছিল এলাকা।
রোববার (১৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১১ টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকাবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন ‘সারেং’ খাবার হোটেল থেকে কেনা ইফতারে মানহীন বেগুনি পাওয়ায় অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এরপর হোটেলের কর্মচারীদের সাথে শিক্ষার্থীরা বাকবিতণ্ডায় জড়ালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি ঘটনাস্থলে এসে রাতে দু’পক্ষের সাথে আলোচনায় বসে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেন।
আরও পড়ুন: ইফতারে পচা খাবার দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১টার দিকে এলাকাবাসী একত্রিত হওয়ার খবর পেয়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা পালটা আক্রমণ করে। এসময় হোটেলের গ্লাস ও আসবাবপত্রে ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এরপর দফায় দফায় চলে ধাওয়া পালটা ধাওয়া, লাঠি হাতে শোডাউন ও ইট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়।
এ বিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ বলেন, হোটেলের খাবারের মানের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমার। এসব বিষয়ে আমরা যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেই। পরবর্তীতে আমাদের মনিটরিং থাকবে। এমন কোন অভিযোগ থাকলে আমাদের জানালে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
সারেং হোটেলের পরিচালক সালাম মিয়া জানান, বেগুনি পচা ছিল না, ইফতারের আগে তাড়াতাড়ি করায় একটু কম ভাজা হয়েছে। মূলত পূর্ববর্তী ঘটনার রেষ ধরে গতকাল কিছু শিক্ষার্থী প্রথম দফায় আমার হোটেলে ভাঙচুর এবং দ্বিতীয় দফায় আবারও ভাঙচুর ও ক্যাশ লুটপাট করে। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার এবং ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই।
এ ঘটনায় সোমবার (১৮ মার্চ) দোকান মালিক সমিতি ও এলাকাবাসী একজোট হয়ে সারেং হোটেলে হামলার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন খাবারের দোকানসহ সকল ধরনের দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে বিকালে বিষয়টি সুরাহার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন এবং দোকান মালিক সমিতি আলোচনায় বসে। আলোচনায় প্রতিটি দোকানে দৃশ্যমান মূল্য তালিকা রাখা, খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং সকল দোকানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রতিনিধি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধিসহ একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে খাবারের পরিবেশ ও গুণগত মান নিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই অসন্তোষ ছিল। যার কারণেই গতকাল এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছে যে, খাবারের মান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ কারণে খাবারের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং সকল দোকানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি এ ধরনের সংকট আর তৈরি হবে না।