ইফতার পার্টি না করতে নির্দেশ: জাবি-বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ইফতার মাহফিল আয়োজনের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দুইটার দিকে জাবির প্রধান ফটকে প্রায় পঞ্চাশোর্ধ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানবন্ধনে ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে হাজার বছরের বাঙালি মুসলিম সংস্কৃতির ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, রোজা মুসলমানদের ফরজ ইবাদত। অথচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসলাম ধর্ম চর্চার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন পুজার অনুমতি দিলেও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ইসলাম ধর্ম পালনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বলতে চাই, কুচক্রী মহল যত ষড়যন্ত্র করবে আমরা আরও বেশি বেশি সোচ্চার হবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর সাদ বলেন, রোজাকে আমরা অন্তর দিয়ে লালন করি। মুসলিমদের হাজার বছরের ঐতিহ্য রোজা রাখা, ইফতার করা। মুসলিমরা রোজা রাখবে এটাই স্বাভাবিক। শাবিপ্রবি ও নোবিপ্রবিতে ইফতার পার্টিকে নিষিদ্ধ করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত করছে। অথচ তারা মাদক ও অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করতে পারেন না। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই আমাদের আবেগ নিয়ে খেলবেন না। আমরা আমাদের ঈমানের জায়গা থেকে এসব অপসংস্কৃতি কে রুখে দিতে চাই।
আরও পড়ুন: ইফতারের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে জবিতে মিছিল, প্রশাসনের বাধা
অন্যদিকে এদিন দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এর পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে তারা। এ সময় দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে আগামী ৩ রমজান (১৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সিএসই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুসাব্বির হোসেন বলেন, রমজান একটি বরকতের মাস, ইবাদতের মাস। কিন্তু বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চলছে। ইসলামি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য তলে তলে পাঁয়তারা চলছে। শুধু অন্য বিশ্ববিদ্যালয় নয় আমাদের প্রশাসনেও সরষের ভেতর ভূত আছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা অর্থ দিয়ে দীর্ঘ পরিশ্রম করে ইসলামি ক্যালিওগ্রাফি করেছে অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা মুছে দিয়েছে।
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন বলেন, ইফতার পার্টির বন্ধের মাধ্যমে আমাদের ঈমানের ওপর আঘাত হানা হচ্ছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগ ডে বা সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা হয়েছে কিন্তু পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে ইফতারকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হয়েছে কেউ বলতে পারবে না।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (১১-মার্চ) শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একইদিনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা ভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে সকল প্রকার ইফতার পার্টি আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে গণ ইফতারের ঘোষণা দিয়েছেন।