শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজ-মাছ চাষ-বনায়ন শেখাচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো ‘সহশিক্ষা বিষয়ক কর্মশালা ও তাঁবুবাস’ কর্মসূচি গ্রহণ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো ‘সহশিক্ষা বিষয়ক কর্মশালা ও তাঁবুবাস’ কর্মসূচি গ্রহণ  © জনসংযোগ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো ‘সহশিক্ষা বিষয়ক কর্মশালা ও তাঁবুবাস’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ‘দেশ গড়ি’ শীর্ষক স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) থেকে পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জে ৪ দিনব্যাপী এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। রবিবার (১০ মার্চ) পর্যন্ত চলমান এ বিশেষ কর্মশালা ও তাঁবুবাসে আগত ছাত্রছাত্রীরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ, উদ্ভাবন, মেন্টাল হেলথ, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, বনায়ন, কৃষিকর্ম, পুকুর খনন, মাছ চাষ, হাইকিং, কর্মজীবন অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।

রংপুর বিভাগের নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলা থেকে ৬১টি কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকসহ এ কর্মসূচিতে প্রায় ৭০০ জন অংশগ্রহণ করছে। বৃহস্পতিবার সকালে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে শিক্ষার্থীদের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শোনানো হয়। এরপর ওই ভাষণের ওপর বিশেষ কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন উপাচার্য ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মশিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে এ ধরনের কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঙালিকে প্রস্তুত করেছেন। তিনি সশস্ত্র গেরিলা যোদ্ধা হওয়ার জন্য বাঙালিকে উজ্জীবিত করেন। ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামে পরাশক্তিরা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বীর বাঙালি যেভাবে জেগে ওঠে তার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা নিশ্চিত হয় এবং আমরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পাই। বাংলাদেশ স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা পায়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, তোমার এখন যে সবুজ ভূখণ্ডে বসে আছ। আজকে আমরা যে স্বাধীন দেশের মালিক, সেই স্বাধীনতা পেতে আমাদের ৩০ লক্ষ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে জীবন দিয়েছেন। ২ লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়ে সয়ে লাল-সবুজের মানচিত্র এনে দিয়েছেন। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের অনেক দুঃখ, কষ্ট, প্রতিবন্ধকতা আছে। এসব বাধা পেরিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আজকে আমরা পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জে প্রথম যে কর্মসূচি শুরু করেছি সেটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ঐতিহাসিক দিন। এর পরিসর অল্প হতে পারে। কিন্তু মানুষ গড়ার এই বিপ্লবকে আমরা গোটা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। তোমাদের প্রতিবন্ধকতাকে ঘুচিয়ে দিতে চাই। তোমরা জান, এক সময় আমাদের ভোট এবং ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। এই উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কারণে আমাদের মঙ্গা নেই। আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসস্পূর্ণ। ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্মার্ট বাংলাদেশের পথে রয়েছে। আমাদের স্বপ্ন তোমরা বাংলাদেশকে শুধু উপমহাদেশে নয়, বিশ্বে নেতৃত্ব পর্যায়ে নিয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, দেবিগঞ্জের সবুজ-শ্যামল প্রান্তে তোমরা বেড়ে উঠছ। পৃথিবীতে আমরা মানবিক বাংলাদেশের রোল মডেল হতে চাই। উন্নত দেশ যেখানে কোভিড উত্তর পৃথিবীতে যুদ্ধে জড়ায়, সেখানে আমরা মিয়ানমারের লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। তোমরা নিজেদের প্রস্তুত কর। সময় নষ্ট করবে না। কারণ তোমরা এই সুন্দর দেশটাকে সাজিয়ে রাখবে তোমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য। যেমনটা আমাদের পূর্বসূরীরা করে গেছেন। আমাদের ভালো থাকবার জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তাদেরও ভালো থাকবার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেননি। লাফিয়ে লাফিয়ে জীবনটাকেই বিলিয়ে দিয়েছেন। মনে রাখবে, তাদের প্রতি আমাদের রক্তের ঋণ আছে। তোমরা এই দেশটাকে সাজিয়ে রাখলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দর সমাজ পাবে। দেশকে আরও এগিয়ে নেবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে সোনায় সোনায় ভরে দেবে এই দেশ। স্মার্টনেস আর কিছুই না- স্মার্টনেস হচ্ছে সহনশীলতা, জবাবদিহিতা, দুর্নীতিকে না বলা, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।

উদ্বোধনী পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এই কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক রবিউল হকসহ স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 


সর্বশেষ সংবাদ