বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ চায় চবি শিক্ষক সমিতি 

বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ লঙ্ঘন এবং শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও অসংগতি ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শিক্ষক সমিতি। চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় তারা।

রোববার (০৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস. রহমান হলে আয়োজিত শিক্ষক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যয়ের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ব্যাখ্যা চেয়েছে। জবাব সন্তোষজনক হয়নি উল্লেখ করে এ সকল অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন প্রমাণ করে বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগসমূহ এবং তার ধারাবাহিকতায় উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি মোটেও অমূলক নয়।

তিনি আরও বলেন, এই দুইজন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতি আন্দোলন চালিয়ে যাবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য শিক্ষক সমিতি সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, আমরা আগেও বলেছি এখনো বলছি, ৭৩ এর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনকে সমুন্নত রাখার এবং নিয়ম বিধি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার কথা বলে আসছি। কিন্তু উপাচার্য ও উপ উপাচার্য আইনকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করছেন যার কারণে আজকের এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় উপাচার্য ও উপ উপাচার্য সবচেয়ে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই দুইজনের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত। তাদের পদত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করি। আমরা মাননীয় সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ আপনারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে উপাচার্য এবং উপ উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলমান প্রশাসনের নানান অগ্রহণযোগ্য কার্যক্রম বিষয়ক সংবাদ প্রদর্শনীর পাশাপাশি আগামী ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এবং ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি (পরীক্ষা আওতামুক্ত থাকবে) ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে পরবর্তীতে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষক সমিতি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, দুই বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির আপত্তির মুখেই ১৭ ডিসেম্বর আইন বিভাগ ও ১৮ ডিসেম্বর বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের নিয়োগ বোর্ড ডাকা হয়। ১৭ ডিসেম্বর আইন বিভাগের নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে উপাচার্য কার্যালয়ে অবস্থান করে কোনো সুরাহা না হলে উপাচার্য ও উপ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ১৮ ডিসেম্বর থেকে টানা কর্মসূচি ও প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

শীতকালীন বন্ধ ও নির্বাচনের কারণে ২২ ডিসেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত ছিল। সর্বশেষ গত রোববার (১৪ জানুয়ারি) থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনে কর্মসূচি পালন করছে। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে 'সংবাদ প্রদর্শনী' কর্মসূচি চলমান রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ