পরিকল্পিতভাবে নদী হত্যা করা হচ্ছে: চবিতে মুক্ত আলোচনায় বক্তারা

নদী কাহন শিরোনামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ-পরিবেশ রক্ষা জাতীয় কমিটি নামের সংগঠনটির উদ্যোগে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘পরিকল্পনা করে এখন নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। নদী নিয়ে আমাদের যা অর্জন তা বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এসব রুখতে হবে। নদীকে বাঁচাতে হবে। কারণ নদী না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। দেশ না বাঁচলে আমাদেরও অস্তিত্ব থাকবে না।’ বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ বাঁচবে অস্তিত্ব, নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, অস্তিত্ব বাঁচাও’ প্রতিপাদ্যে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সংগঠনটির মুখ্য সচিব মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেটির জন্ম হয়েছে নদীর অববাহিকায়। অর্থাৎ দেশের মূল অস্তিত্ব নদী। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। আমাদের আবহাওয়া নষ্ট হয়েছে,জলবায়ু নষ্ট হয়েছে, বায়ু দূষিত হয়েছে।  আমাদের স্বাধীনতার এই ৫২ বছরে আমরা সব শেষ করে দিয়েছি।

বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে ব্যক্তির নামে নদী আছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে শুঁটকি নামের একটি নদী রয়েছে। ১৯৭২ সালে এক লোক ২৬ মাইল দীর্ঘ এ নদীটি তাঁর দাদার উল্লেখ করে মামলা করেন। ১৯৭৩ সালে আদালত  নদীটি ওই লোকের দাদার উল্লেখ করে রায় দেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় এখন পর্যন্ত কেউ এ নদী উদ্ধার করেনি।

সমস্যার সমাধান খুঁজতে ৬৪ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব। কেন আমরা হেরে যাচ্ছি। কেন নদী রক্ষা করা যাচ্ছে না। কারণ নদী না বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে না। পরিবেশ না বাঁচলে আমাদের নিশ্বাস বাঁচবে না।

পরিকল্পনা করে ব্রহ্মপুত্র  নদীকে জীবন্ত মেরে ফেলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ২ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ব্রহ্মপুত্র খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে খননের অবস্থা  বলার মতো নেই। ব্রহ্মপুত্র নদী এখন নালায় পরিণত হয়েছে। আবার বুড়িগঙ্গায় এখন আর বর্জ্যর জন্য নামা যায় না। পুরান ঢাকার লোকেরা আক্ষরিক অর্থে এখন নর্দমার পানি খাচ্ছে। বাংলাদেশর নদীর সংখ্যা হিসাবেও ভুল আছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান জানান, সরকারি হিসাবে বলা হয় দেশে নদীর সংখ্যা ৪০৫ টি। কিন্তু দেশের মূল নদী রয়েছে আড়াই হাজারের বেশি।

পর্যটন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেসুর রহমান বলেন, এ ভূখণ্ডের জন্মই হয়েছে গঙ্গা (পদ্মা) ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মধ্যে দিয়ে। এ কারণেই আমরা এ দেশকে নদীমাতৃক দেশ বলি। অর্থাৎ এ দেশটির প্রধান সম্পদ হচ্ছে নদী। কিন্তু এ সম্পদ রক্ষা করতে আমরা ব্যর্থ। এ কারণে আমরা দরিদ্র দেশে পরিণত হচ্ছি।

নিজ জেলা চাঁদপুর বিভিন্ন নদীর দখলের কথা জানিয়ে অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাঈনুদ্দিন খান বলেন, নদীর দখলদারেরা ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী। আবার সকলেই সংঘবদ্ধ। এ কারণে এককভাবে প্রতিবাদ করে এ দখল বন্ধ করা সম্ভব না। সকলকে এক হয়ে তাঁদের প্রতিরোধ করতে হবে।

শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ উল্লেখ করে গাজীপুর জেলার এক শিক্ষার্থী বলেন, আগে নদীতে মাছ ধরে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে৷ কিন্তু এখন চুম্বক দিয়ে নদী থেকে লোহার বর্জ্য তুলে জীবিকা নির্বাহ করে। দূষণের কারণে পেশায় বদলিয়ে ফেলেছেন লোকজন। এ দূষণ বন্ধ করতে হবে।

আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটনের সভাপতি মোখলেসুর রহমান, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ. আলী আর রাজী, সংগঠনটির মুখ্য সচিব মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির উপপরিচালক নাজির আহমেদ, নিরাপদ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কার্যকরী সদস্য ইবনুল সৈয়দ প্রমুখ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজ জেলার নদী দখল ও দূষণের চিত্র বর্ণনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ