সুফল পেতে শুরু করেছে খুবির ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট’
- ফাহিম শাহরিয়ার, খুবি
- প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৩৯ PM , আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০১:০৫ PM
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস করার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয় সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট। প্রকল্পটি উদ্বোধনের মাত্র ১০ মাসের মধ্যেই সফলতা পেতে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে কোথাও এখন এক টুকরো ময়লা-আর্বজনা থাকে না। নতুন প্রকল্পে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে তৈরি করা হয়েছে আবর্জনা সংগ্রহ নেটওয়ার্ক।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে অজৈব আবর্জনাগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর সেই ধোয়া ৪০ ফুট উচ্চতায় চিমনি দিয়ে বের হয়। ময়লা-আর্বজনার মধ্যে বাছাই করে জৈব আবর্জনা দিয়ে তৈরি হচ্ছে কম্পোস্ট সার। ভবিষতে বাণিজ্যিকভাবে এ কম্পোস্ট সার বিপণন করা হবে।
আমরা নিজেরাই পরিবেশ দূষণ করছি। সবার আগে নিজেদের ক্যাম্পাসকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। -অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন, উপাচার্য, খুবি
জানা যায়, ‘গ্রিন-ক্লিন-সেভথ বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণের অংশ হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ করা হয়েছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্ট। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অর্থায়নে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে গত বছরের ২৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে সব জায়গায় প্রায় শতাধিক নীলরঙের ডাস্টবিন নিদিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে তাদের ব্যবহারিত ময়লা-আর্বজনা জমা রাখেন। এরপর দক্ষ প্ল্যান্ট কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সঠিক নির্দেশনা মোতাবেক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকেন।
ময়লা-আবর্জনার প্ল্যান্ট
প্রতিদিন প্রায় ৩-৪ বার এ বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে দৈনিক প্রায় ২৫০ কেজি পচনশীল ও ২০০ কেজি অপচনশীল বর্জ্য পাওয়া যায়। যে ময়লা-আবর্জনা নিচে বা ক্যাম্পাসের আশেপাশে পড়ে থাকে, প্ল্যান্টের কর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করেন এবং প্ল্যান্টে নিয়ে যান।
আরও পড়ুন: লাল ডাস্টবিনে পচনশীল, নীলে অপচনশীল বর্জ্য
পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানিয়েছেন, প্ল্যান্টে নিয়ে যাওয়া বর্জ্যকে তিন স্তরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়। অজৈব ও দাহ্য বর্জ্যগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ধোঁয়া ৪০ ফুট উঁচু চিমনি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয় না। অজৈব ও অদাহ্য বর্জগুলো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর জৈব বর্জ্যগুলো দিয়ে প্ল্যান্টের এক পাশে উন্নত মানের সার উৎপন্ন করা হয়।
ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক নীলরঙের ডাস্টবিন বসানো হয়েছে
সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান্টের তত্ত্বাবধায়ক মো. আজমুল হুদা আজাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্জ্য সংগ্রহ করে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করা হয়। পরে পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয়। আর অপচনশীল দ্রব্যের মধ্য থেকে প্লাস্টিক-জাতীয় দ্রব্য আলাদা করে বাইরে বিক্রি করা হয়। আর অন্য দ্রব্য চুল্লিতে পোড়ানো হয়।
নতুন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসে সব জায়গায় প্রায় শতাধিক নীল রঙের ডাস্টবিন নিদিষ্ট দূরত্বে বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখানে তাদের ব্যবহারিত ময়লা-আর্বজনা জমা রাখেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্ল্যান্টটি যেমন পরিবেশের ওপর ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, ঠিক তেমনি প্ল্যান্ট থেকে বৃহৎ পরিসরে সার উৎপাদন করা গেলে আগামীতে কৃষি খাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আমরা নিজেরাই পরিবেশ দূষণ করছি, নষ্ট করে ফেলছি। সবার আগে নিজেদের ক্যাম্পাসকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নিজে সচেতন হতে হবে, অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবেই আমাদের ক্যাম্পাস গ্রিন ক্যাম্পাসে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।