সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে রইলো বাকি ২০

উচ্চশিক্ষা
উচ্চশিক্ষা  © টিডিসি ফটো

দেশের উচ্চশিক্ষার বিস্তারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়। দলটির সে উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের অর্ধেকের বেশি জেলায়। সম্প্রতি দেশের আরও ৬টি জেলায় উচ্চশিক্ষালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। ফলে নতুন করে এসব জেলায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন করা হলে দেশের ৪৪ জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পাবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। 

ইউজিসির সর্বশেষ সুপারিশ প্রাপ্ত এসব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন হলে দেশের ৪৪ জেলায় প্রতিষ্ঠা হবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে দেশে ৬২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মোট ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত প্রায় ১৫ বছরে দেশে ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। তাদের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটানো।

দেশে সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্থানপর্বে সবচেয়ে বেশি সরকারি বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পায় বিগত ১৫ বছরে। ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশে এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৩২টি। বর্তমানে এ দাঁড়িয়েছে ৬২’তে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আগে দেশে সর্বশেষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৮ সালের অক্টোবরে; নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামে উচ্চশিক্ষালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের উত্তরের জেলা রংপুরে। বেগম রোকেয়ার জন্মস্থানে প্রতিষ্ঠিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ছিল দেশের ৩০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে আমাদের এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি চাকরির বাজার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান এবং দক্ষ শিক্ষার্থী অর্থাৎ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দিতে হবে। সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অনিয়মের তথ্য আসছে—সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পরিহার করতে হবে রাজনৈতিক বিবেচনা— শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান

শিক্ষাবিদরা বলছেন, জেলায় জেলায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি চাকরির বাজার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান এবং দক্ষ শিক্ষার্থী অর্থাৎ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দিতে হবে। 

৭ জেলায় ৩১ বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে রাজধানী ঢাকায়; সংখ্যার হিসেবে এটি ৯। এরপর রাজধানীর নিকটতম জেলা গাজীপুর এবং দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে রয়েছে সমান সংখ্যক ৫টি করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় জেলা খুলনায় ৪টি; রাজশাহী ও সিলেটে ৩টি করে এবং সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত বিভাগ ময়মনসিংহে রয়েছে ২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

২২ জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয়
দেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে সরকারের সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে দেশে প্রতিষ্ঠা পায় ২২ টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অবস্থানের বিচারে কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, চাঁদপুর, রাঙামাটি, নোয়াখালী, কুমিল্লা, যশোর, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, নেত্রকোণা ও জামালপুরে স্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান পরিচালনা করছে এসব সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে দেশে ৬২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মোট ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত প্রায় ১৫ বছরে দেশে ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। তাদের এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটানো।

সংসদে বিল পাস ২ বিশ্ববিদ্যালয়ের
মেহেরপুর ও নওগাঁ জেলায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সংসদে বিল পাস হয়েছে গত জানুয়ারিতে। ফলে নতুন করে এ দুই জেলায় স্থাপিত হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

২ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন চূড়ান্ত অনুমোদন
দেশের দক্ষিণের জেলা লক্ষ্মীপুরে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আইন চূড়ান্ত হয়েছে গত ১৯ জুন। এর আগে বিগত মে মাসে বগুড়ায় একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।

আরও ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়ার অনুমোদন
বিগত আগস্টে নাটোরে একটি এবং সেপ্টেম্বরে সাতক্ষীরা ও নারায়ণগঞ্জ নতুন করে আরও ২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নওগাঁ ও ঠাকুরগাঁও জেলায় দুটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।

৬ জেলায় নতুন করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ
দেশের উচ্চশিক্ষা বিন্যস্তকরণ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সম্ভাবনা বিবেচনায় নতুন করে আরও ৬ জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব জানিয়েছে ইউজিসি। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রস্তাবনায় দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থাটি কক্সবাজার, ভোলা, নড়াইল, রাজবাড়ি, বরগুনা ও জয়পুরহাটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ জানিয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই দেশের ২০ জেলায়
উচ্চশিক্ষা বিস্তারে দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনায় সরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে ৪৪ জেলায়। সরকারি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, কৃষিসহ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাঠদান করছে উচ্চশিক্ষালয়গুলো। তবে সরকারের ব্যাপক উদ্যোগের পরও এখনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি দেশে বর্তমানে এমন জেলার সংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে নেই কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার দিক থেকে ঢাকার পরেই রয়েছে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ। খুলনা বিভাগের ৪টি জেলায় নেই কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। জেলাগুলো হলো- চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, বাগেরহাট ও ঝিনাইদহ। তবে সরকারের ধারাবাহিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অচিরেই এমন জেলায়ও সরকারি উদ্যোগে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রত্যাশা জেলাগুলোর সচেতন মহল।

চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর রংপুর বিভাগের ৩ জেলায়- পঞ্চগড়, নীলফামারী ও গাইবান্ধা এবং বরিশাল বিভাগের একটি জেলা ঝালকাঠিতে নেই কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। একই সাথে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই এমন জেলার তালিকায় রয়েছে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার এবং সদ্য ও সর্বশেষ প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা।

অ্যাকসেস টু হায়ার এডুকেশন (উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ) বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এ উদ্যোগকে ইতিবাচক বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান। এই শিক্ষাবিদের মতে, কোনো জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে নিরূপণ করা যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত চাহিদার। সেজন্য সবার দোরগোড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে মান এবং প্রতিষ্ঠান গড়ার পেছনে খরচ বিচার করার পরামর্শ তার। 

অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর বলেন, আমাদের কিছু আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়; যেমন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। তাই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে আমাদের এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি চাকরির বাজার বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান এবং দক্ষ শিক্ষার্থী অর্থাৎ মানবসম্পদ তৈরিতে জোর দিতে হবে। সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অনিয়মের তথ্য আসছে—সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পরিহার করতে হবে রাজনৈতিক বিবেচনা।


সর্বশেষ সংবাদ