ইডেনে ছাত্রী হেনস্তা

ওই ছাত্রীর মনে যা এসেছে রং মাখিয়ে তাই বলেছে—বললেন ইডেন অধ্যক্ষ

ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য  © ফাইল ফটো

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রী নির্যাতন ও অন্যান্য বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন নুসরাত জাহান কেয়া নামে এক শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীকে অধ্যক্ষের কক্ষে ৬ ঘণ্টা আটকে রেখে হয়রানি, মানসিক নির্যাতন ও জোর করে অঙ্গীকারনামা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই না। এমন করার প্রশ্নই আসে না।’ মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে গণমাধ্যমকে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তার (নুসরাত জাহান কেয়া) সঙ্গে আমরা স্বাভাবিকভাবেই কথাবার্তা বলেছি। আনুমানিক ৫২ মিনিটের মতো কথা হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে ছাত্রীর সঙ্গে আমরা তো কথা বলতেই পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (১৭ অক্টোবর) ইডেন মহিলা কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক ছিল। ওই ছাত্রী তার বিভাগে সার্টিফিকেট নিতে আসার পর বিভাগীয় প্রধান এখানে নিয়ে আসেন। সেখানে ইডেন মহিলা কলেজ নিয়ে তার বক্তব্যের ব্যাপারে আমরা জানতে চাই। বৈঠকে উপস্থিত বিভাগীয় প্রধানরাও তার কাছে জানতে চেয়েছেন এসব বক্তব্যের যথেষ্ট প্রমাণ বা কোনো ভিত্তি আছে কি না। সন্তোষজনক কোনো জবাব সে দিতে পারেনি। এরপর তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় অভিভাবক এসে তাকে নিয়ে যান। সে এই বিষয়টিকেই রং মেখে তার মনে যা এসেছে তাই বলেছে।’

অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে শিক্ষার্থীকে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বক্তব্য। সর্বোপরি সে আমার শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে কোনো শিক্ষকই খারাপ আচরণ করেননি। ইডেন মহিলা কলেজ নিয়ে তার মন্তব্যের ব্যাপারে আমরা শুধু ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। সে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’

ওই ছাত্রীর অসুস্থতার কোনো বিষয়ও চোখে পড়েনি উল্লেখ করে অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য বলেন, ‘সবকিছুর পরেও কিন্তু ও আমাদের শিক্ষার্থী। আমরা যখনই জেনেছি ও গণস্বাস্থ্যে (গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র) ভর্তি হয়েছে সঙ্গে সঙ্গেই কলেজ থেকে ওর বিভাগের শিক্ষক এবং হলের একজন তত্ত্বাবধায়ককে সেখানে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া গতকাল সম্পূর্ণ সুস্থভাবে কলেজ থেকে বেরিয়েছে। তার খারাপ লাগছে বা অসুস্থতার কোনো বিষয়ও আমাদের বলেনি। তার অভিভাবক সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় নিয়ে গেছেন।’

‘তাছাড়া আবাসিক হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারে না- এমন মন্তব্য সত্য নয়। এখানে অসংখ্য আবাসিক শিক্ষার্থী হলে নিরাপদে ও নিরাপত্তার সঙ্গে অবস্থান করছে এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে প্রতিষ্ঠানের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে’- বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে সোমবার (১৭ অক্টোবর) ইডেন কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুসরাত জাহান কেয়া।

তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল দুপুর ১২টার দিকে অনার্সের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট (সাময়িক সনদপত্র) আনার জন্য কলেজে যাই। ডিপার্টমেন্টে গেলে শিক্ষকরা বলেন অধ্যক্ষ আমার সঙ্গে কথা বলবেন। পরে আমাকে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি কেন কলেজের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কথা বলেছি তার কারণ জানতে চান ৷ আমার ব্যাগ, মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ম্যামরা আমাকে স্যালাইন পান করতে দেন।’

কেয়া আরও অভিযোগ করেন, আমার কাছে জোরপূর্বক মুচলেকা আদায় করা হয়৷ আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তার কারণ লিখিত আকারে দিতে বলা হয়। আমার বাড়িতে ফোন দিয়ে বাবা-মাকে এসে আমাকে নিয়ে যেতে বলে। বাবা-মা গ্রামে থাকায় তারা আসতে পারেননি। পরে ঢাকায় আমার এক চাচাতো ভাই থাকেন, তিনি এসে লিখিত দিয়ে আমাকে কলেজ থেকে নিয়ে যান। আমি এখনো অসুস্থ।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের অন্তর্কোন্দলের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নুসরাত জাহান কেয়া বক্তব্য দেন।


সর্বশেষ সংবাদ