পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদন

বিসিএসে অবিবাহিতদের দাপটই বেশি

বিসিএস
বিসিএস  © টিডিসি ফটো

বিসিএস ক্যাডার কারা বেশি হচ্ছেন? বিবাহিত নাকি অবিবাহিতরা। গত মাসের শেষ দিকে ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ‘সাফল্যের কারণ’ হিসেবে সবচেয়ে বড় আকারে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে, তা হলো এই বিবাহিত-অবিবাহিতের সমীকরণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ট্রল— ‘নারীর অনুপ্রেরণায় বেশি ক্যাডার হচ্ছেন পুরুষ প্রার্থীরা; বিপরীত চিত্র ঘটছে নারী প্রার্থীর ক্ষেত্রেও।’ বলা হচ্ছে, এবারের বিসিএসে (৪০তম) চূড়ান্ত ফলাফল বিবাহিতরাই সবচেয়ে বেশি সফল। এ কারণে বিসিএস নামক এই ‘সোনার হরিণ’ ধরতে বিয়ে করার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেকেই।

তবে পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্যটি পুরোটাই উল্টো। কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বিসিএসে অবিবাহিতরাই এগিয়ে রয়েছে। ৪০তম বিসিএসের তথ্য পাওয়া না গেলেও ৩৬তম, ৩৭তম, ৩৮তম, ৩৯তম (বিশেষ) এবং ৪২তম (বিশেষ)— সর্বশেষ ৫ বিসিএসের ফলের পরিসংখ্যান থেকে অবিবাহিতদের এগিয়ে থাকার এই তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১ মার্চ রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২১ জমা দিয়েছে পিএসসি। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রতিবেদনটি জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়েছে।

প্রতিবেদন তথ্য বলছে, সাধারণ বিসিএসগুলোতে (৩৬তম, ৩৭তম, ৩৮তম) চাকরি পাওয়া প্রার্থীদের ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত অবিবাহিত, সেখানে বিশেষ বিসিএসে (৩৯তম ও ৪২তম) উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের প্রায় ৫৪ শতাংশ অবিবাহিত। অন্যদিকে ২৩ থেকে ২৭ বছর বয়সী প্রার্থীরাই বেশি চাকরি পাচ্ছেন। এ সংখ্যা প্রায় ৬৬ শতাংশ।

পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। ওই বিসিএসে ২ হাজার ৩২৩ জনকে চাকরির জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি, যাদের মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ অবিবাহিত। বাকিরা বিবাহিত। সংখ্যা হিসেবে অবিবাহিত ১ হাজার ৯৯৭ জন, আর বিবাহিত ৩২৬ জন।

৩৭তম বিসিএসে সুপারিশ পাওয়া ১ হাজার ৩১৩ জনের মধ্যে ৮৪.৬২ শতাংশ ছিলেন অবিবাহিত। বাকিরা বিবাহিত। সংখ্যা হিসেবে অবিবাহিত ১ হাজার ১১১ জন, অন্যদিকে বিবাহিতের সংখ্যা ২০২।

২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হওয়া ৩৮তম বিসিএসে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল ২ হাজার ২০৪ জনকে। এর মধ্যে প্রায় ৮৪.০৩ শতাংশ অবিবাহিত। বাকিরা ১৫.৯৭ শতাংশ বিবাহিত। সংখ্যা হিসেবে অবিবাহিত ১ হাজার ৮৫২ জন এবং বিবাহিত ৩৫২ জন।

২০১৭ সালের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হওয়া ৩৯তম বিসিএস ছিল বিশেষ বিসিএস। এই বিসিএসে কেবল চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ওই বিসিএসের মাধ্যমে ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ৪৩.৮৮ শতাংশ বিবাহিত। বাকি ৫৬.১২ শতাংশ অবিবাহিত। সংখ্যা হিসেবে অবিবাহিত ৩ হাজার ৮১২ জন এবং বিবাহিত ২ হাজার ৯৮০ জন।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০২১ সালে বিশেষ বিসিএসের (৪২তম) মাধ্যমে ৪ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয় সরকার। ২০২০ সালের এই বিজ্ঞপ্তিতে প্রায় ৪৫.৬৫ শতাংশ বিবাহিত। আর বাকি ৫৪.৩৫ শতাংশ অবিবাহিত। সংখ্যা হিসেবে অবিবাহিত ২ হাজার ১৭৪ এবং বিবাহিত ১ হাজার ৮২৬ জন।

পিএসসির বার্ষিক প্রতিবেদনে আবেদনকারী ও সুপারিশকৃত পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীদের বৈবাহিক অবস্থার তুলনামূলক বিবরণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, যোগ্য আবেদনকারীর মধ্যে ৩৬তম, ৩৭তম, ৩৮তম, ৩৯তম (বিশেষ), ও ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসে বিবাহিত প্রার্থী যথাক্রমে ৪৫ হাজার ২৩৩ (২১.৪১%) জন, ৫১ হাজার ৯৭৯ (২১.৩৫%) জন, ৮১ হাজার ১১৬ (২৩.৪১%) জন, ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৬ (৪৩.৬৯%) জন ও ১৪ হাজার ৯১৪ (৪৮.০৭%) জন এবং অবিবাহিত প্রার্থী যথাক্রমে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৯ (৭৮.৫৯%) জন, ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৬ (৭৮.৬৫%) জন, ২ লাখ ৬৫ হাজার ৩২৪ (৭৬.৫৯%) জন, ২১ হাজার ১৬০ (৫৬.৩১%) জন ও ১৬ হাজার ১১২ (৫১.৯৩%) জন।

বিশ্লেষণ করলে আরও দেখা যায় যে, ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসে বিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক বেশি
অর্থাৎ ৪৮.০৭% এবং ৩৭তম বিসিএসে বিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক কম অর্থাৎ ২১.৩৫% আবেদন করেছেন। অন্যদিকে ৩৭তম বিসিএসে অবিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক বেশি অর্থাৎ ৭৮.৬৫% এবং ৪২তম (বিশেষ)বিসিএসে অবিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক কম অর্থাৎ ৫১.৯৩% আবেদন করেছেন।

সুপারিশকৃত প্রার্থীদের মধ্যে ৩৬তম বিসিএস, ৩৭তম বিসিএস, ৩৮তম বিসিএস, ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএস ও ৪২তম (বিশেষ) বিসিএস হতে বিবাহিত প্রার্থী যথাক্রমে ৩২৬ (১৪.০৩%) জন, ২০২ (১৫.৩৮%) জন, ৩৫২ (১৫.৯৭%) জন, ২ হাজার ৯৮০ (৪৩.৮৮%) জন ও ১ হাজার ৮২৬ (৪৫.৬৫%) জন এবং অবিবাহিত প্রার্থী যথাক্রমে ১ হাজার ৯৯৭ (৮৫.৯৭%) জন, ১ হাজার ১১১ (৮৪.৬২%) জন, ১ হাজার ৮৫২ (৮৪.০৩%) জন, ৩ হাজার ৮১২ (৫৬.১২%) জন ও ২ হাজর ১৭৪ (৫৪.৩৫%) জন।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ৪২তম (বিশেষ) বি.সি.এস. হতে বিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক বেশি অর্থাৎ ৪৫.৬৫% এবং ৩৬তম বি.সি.এস. হতে বিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক কম অর্থাৎ ১৪.০৩% সুপারিশ পেয়েছেন। অন্যদিকে, ৩৬তম বি.সি.এস. হতে অবিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক বেশি অর্থাৎ ৮৫.৯৭% এবং ৪২তম (বিশেষ) বি.সি.এস. হতে অবিবাহিত প্রার্থী তুলনামূলক কম অর্থাৎ ৫৪.৩৫% সুপারিশ পেয়েছেন।

বার্ষিক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহবার হোসাইন বলেন, “বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ কমিশনের বিভিন্ন ইউনিট ও শাখা থেকে প্রাপ্ত সম্পাদিত কার্যক্রমের তথ্যাদি সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও অনিচ্ছাকৃত কোন ভুল থাকলে পরবর্তী প্রতিবেদনে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের জনপ্রতিনিধি, পদস্থ ব্যক্তি, পেশাজীবী, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, গবেষক ও উৎসাহী পাঠকের জন্য কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কিত তথ্য, উপাত্ত ও পরিসংখ্যান ব্যবহারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করি।”


সর্বশেষ সংবাদ