৪৬তম বিসিএস কি বাতিল হচ্ছে?

সরকারি কর্ম কমিশন
সরকারি কর্ম কমিশন  © ফাইল ছবি

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। তবে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক গঠন করা তদন্ত কমিটি প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পায়নি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ‘সোহরাব কমিশন’ বিদায় নেওয়ায় ৪৬তম বিসিএস বাতিল হবে কি না সেই প্রশ্ন নতুন করে উঠেছে।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, অভিযুক্তরা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা প্রশ্নফাঁস করেছেন বলেও স্বীকারোক্তি দেওয়ার পরও প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ না পাওয়ায় পিএসসি’র তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় ৪৬তম বিসিএস বাতিল করে নতুন করে এ পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের একটি অংশ।

চাকরিপ্রার্থীদের এ দাবির সঙ্গে পিএসসি’র অনেক কর্মকর্তাই একাত্মতা পোষণ করেছেন। তারাও মনে করছেন ৪৬তম বিসিএস বাতিল করা উচিত। তাদের মতে, যেহেতু প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে এবং আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সেহেতু এই বিসিএসের কার্যক্রম বাতিল করাই উচিত হবে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে পিএসসি’র যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এত বিতর্ক হওয়ার পর এ বিসিএসের কার্যক্রম চলমান রাখা সমীচীন হবে না। নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ হয়েছেন; হয়তো তিনি বিষয়টি নতুন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি মাত্র নিয়োগ পেয়েছি। এখনো শপথ গ্রহণ করিনি। শপথ গ্রহণের পূর্বে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কী বলেছেন অভিযুক্তরা?

সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে ৬ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। 

জবানবন্দি দেওয়া ব্যক্তিরা হলেন— পিএসসি চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলী, ডেসপ্যাচ রাইডার খলিলুর রহমান, অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন ও তার ভাই সায়েম হোসেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটন সরকার।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দির এক পর্যায়ে সাজেদুল দাবি করেন, এই মামলায় গ্রেপ্তার আবু সোলেমান মো. সোহেলের সাথে অনুমানিক ৭-৮ বছর আগে তার পরিচয় হয়। সোহেল ঢাকার মিরপুরে ডেভেলপারের ব্যবসা করেন। সাজেদুল ডেভলপার সোহেলের কাছে জানতে পারেন ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে।

সাজেদুল বলেন, "আমি ১৭ জন প্রার্থী ম্যানেজ করে সোহেলকে দেই। যার মধ্যে ১২ জন প্রার্থী খলিলুর রহমান দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান এবং রুবেল নামে দুইজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। এই প্রার্থীদের সোহেল সারারাত প্রশ্ন পড়িয়েছেন। ১৭ প্রার্থীর মধ্যে ১৩ জন প্রার্থী ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় পাশ করেন।"

"আমি উত্তীর্ণ ১৩ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে বিভিন্ন অ্যামাউন্টে সর্বমোট ১৫–১৬ লাখ টাকা নিয়েছি। এর মধ্যে প্রার্থী প্রতি ১ লাখ হিসেবে ১৩ লাখ টাকা আবু সোলেমান মো. সোহেলকে বুঝিয়ে দিয়েছি," যোগ করেন সাজেদুল।

খলিলুর রহমান তার জবানবন্দিতে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় সাজেদুল ইসলামকে ১২ জন ক্যান্ডিডেট দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, "সাজেদুল ইসলাম পিএসসির সদস্য হেলাল উদ্দীন স্যারের এমএলএসএস। আমি প্রার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ১ লাখ করে টাকা নিয়ে সাজেদুল ইসলামের দেওয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাই।"

এর আগেও বিসিএস-এর প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে দাবি করেন খলিলুর রহমান।

এদিকে, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর বিষয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান আবদুল আলিম বলেন, "জুডিশিয়ারির বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না। আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে।" 

তিনি বলেন, "তবে আমাদের হাতে সময় বেশি ছিল না। কারণ এই প্রতিবেদনের জন্য অনেক বিষয় আটকে ছিল। যেমন— রিটেন ও ভাইভা।"


সর্বশেষ সংবাদ