১৫৯ এটিও নিয়োগে জটিলতা কাটলেও আবেদন গ্রহণে স্থবিরতা
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে ১৫৯ জন সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) নিয়োগের জটিলতা কাটলেও এখনও নতুন করে আবেদন গ্রহণ শুরু হয়নি। উচ্চপর্যায়ের মতামত পেলেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জবাব না পাওয়ায় এটিও নিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রোববার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পিএসসি’র একটি দায়িত্বশীল সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছে, গত ৯ নভেম্বর এটিও পদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সভা করে পিএসসি। আবেদন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ওই সভায় নিরসন করা হয়। তবে আবেদগ্রহণ শুরুর পূর্বে বিষয়টি নিয়ে পিএসসির আইন শাখার মতামত চাওয়া হয়। আইন শাখার মতামত পাওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। তবে মন্ত্রণালয় থেকে চিঠির জবাব না মেলায় নতুন করে আবেদনগ্রহণ শুরু হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএসসির এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এটিও পদে আবেদনগ্রহণের সকল প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। বিষয়টি এখন পিএসসি’র নন-ক্যাডার শাখায় রয়েছে। নন-ক্যাডার শাখা থেকে এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাতে পারবে।’
আরও পড়ুন: দেশে ডজন ধরনের এসএসসি-সমমানের পরীক্ষা, বিশ্বে নজিরবিহীন
এ বিষয়ে জানতে পিএসসি’র নন-ক্যাডার শাখার একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তবে কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে নন-ক্যাডার শাখার কর্মকর্তারা জানান, ‘এটিও পদে নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টে রিট হয়েছিল। সেই রিটে আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আমরা সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠির জবাব পাওয়ার পর নতুন করে আবেদনগ্রহণ শুরু হবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত কেন চাওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, ‘আদালত একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছে। এই স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়েছে কি না কিংবা নতুন করে কেউ রিট করেছে কি না অথবা আবেদনগ্রহণ শুরু করলে কোনো সমস্যা হবে কি না এসব বিষয় আমরা সহজে জানতে পারি না। বিষয়গুলো জানতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমরা নতুন করে আবারও চিঠি পাঠাব। চিঠির জবাব পাওয়া মাত্র আবেদনগ্রহণ শুরু করা হবে।’
জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া নতুন শিক্ষকরা এটিও পদে আবেদন করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এক দফা জটিলতার নিরসন হলেও পরবর্তীতে ফের জটিলতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এ বিষয়ে উচ্চপর্যায় থেকে মতামত পাওয়ায় এটিও পদে নিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে সভা ডাকা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রী মারা গেছেন
সূত্র জানায়, এটিইও পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি গত ২৬ জুন প্রকাশ করে পিএসসি। বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক (অনূর্ধ্ব ৪৫ বছর) এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন বলে জানানো হয়। তবে বিজ্ঞপ্তির নিচে আবেদন নির্দেশিকায় বলা হয়- ‘এ পদে আবেদনের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষকের কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে’।
পরবর্তীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও এটিইও পদে আবেদন করতে পারবেন। গত ১৭ জুলাই মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পিএসসিকে চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মালেক ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
পিএসসিতে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮৫ (সংশোধিত ১৯৯৪), বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের ২০১৫ ও ২০১৮ সালের একই পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরি নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ (বিশেষ বিধান) বিধিমালা, ২০০৩ যাচাই করে পিএসসির প্রকাশিত এটিইও পদে নিয়োগ যোগ্যতার শর্ত সংক্রান্ত জটিলতা অবসান ও বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের প্রয়োজন হলে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠির প্রেক্ষিতে, আবেদন নির্দেশিকা থেকে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেয় পিএসসি। ফলে বিভাগীয় কোটায় পূরণযোগ্য ১৫৯ পদে এটিইও নিয়োগে ১ জুলাই থেকে অনলাইনে যে আবেদন শুরু হয়েছিল তাতে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরাও আবেদন করার সুযোগ পান। ৩১ জুলাই পর্যন্ত এ পদে আবেদন প্রক্রিয়া চলার কথা ছিল।
কিন্তু আবেদন চলাকালে ২৪ জুলাই আবারও নিয়মে পরিবর্তন আনে পিএসসি। আবেদনের শর্তে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতার ঘর যুক্ত করা হয়। এতে ফের জটিলতায় পড়েন নতুন শিক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত এটিও পদে আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করে পিএসসি। অবশেষে উচ্চপর্যায়ের মতামতের প্রেক্ষিতে সেই জটিলতা কাটল।